প্রতি মাসের প্রথম রোববার সকল ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। পাশাপাশি সংগঠনটি বলছে, নীতিনির্ধারকেরা গণপরিবহন ব্যবহার করলেই সাধারণ মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ উপলব্ধি করতে পারবেন। ফলে গণপরিবহনের মান বাড়তে পারে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকার পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থায় উদ্বেগজনকহারে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা যেমন বাড়ছে, ঠিক তেমনি নগর এলাকায় পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থায় গণপরিবহন ব্যবহারকারী ও পথচারীদের যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নগর এলাকায় ব্যক্তিগত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়াস সারা বিশ্বজুড়ে বেগবান হলেও বাংলাদেশে এই প্রয়াস সীমিত।
তিনি বলেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করে বরং সাইকেল, হাঁটা বা গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে প্রতি বছরের ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবস পালন করা হয়। প্রতি মাসের প্রথম রোববার সকল ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। ২০০৬ সাল থেকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে দিনটি উদযাপন করা হচ্ছে। তবে ২০১৬ সাল থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে এটি পালন শুরু হয়, যেখানে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) মুখ্য সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করে এসেছে।
ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে আইপিডি দাবি করছে, প্রতি মাসের প্রথম রোববার সকল ধরনের ব্যক্তিগত গাড়ি বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। এর ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে নগরের যানজট কমানোর সম্ভাবনা অনুধাবন করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি গণপরিবহন ও পায়ে হেঁটে চলাচলের সুযোগ-সুবিধায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবেন নীতিনির্ধারকেরা।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা শহর কি পরিমাণ ব্যক্তিগত গাড়ি ধারণ করতে পারবে, সেই বিষয়ে বিআরটিএ, ডিটিসিএ, ট্রাফিক বিভাগ, রাজউক ও সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো বিশ্লেষণ ও সমীক্ষা নেই। ঢাকা শহরে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যক্তিগত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দিয়ে চলছে বিআরটিএ। নগর পরিকল্পনা ও পরিবহন পরিকল্পনার মধ্যে সমন্বয় নেই, কর্তৃপক্ষগুলোর মধ্যেও নেই কার্যক্রমের সমন্বয়।
ঢাকা শহরে লক্করঝক্কর বাস আর গণপরিবহনের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনের দু:খকষ্টকে ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়া নীতিনির্ধারকগণ উপলব্ধিই করতে পারেন না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ বলেন, ঢাকা শহরে মানসম্মত গণপরিবহন নেই বললেই চলে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মেট্রোরেলের একটি লাইন আংশিক চালু হলেও ঢাকার যোগাযোগ চাহিদার খুবই অল্প পরিমাণ লোককে ধারণ করতে পারছে এই লাইন। ঢাকার বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্প ধীর গতিতে চলছে।
তিনি বলেন, রাজধানীজুড়ে একের পর এক উড়ালসড়ক হয়েছে। কিন্তু যানজট কমাতে পারেনি কোনোটিই। সদ্য আংশিক চালু হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও যানজট কমাতে পারেনি; বরং কিছু জায়গায় বেড়েছে। জনগণের টাকায় এক্সপ্রেসওয়ে হলেও বড় অংশই তা ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে না। ধনী-গরিবের মধ্যে যে বৈষম্য, তা এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে আরও দৃশ্যমান করেছে।
আইপিডি পক্ষ থেকে বলা হয়, নগর এলাকায় কার ফ্রি স্ট্রিট, কার ফ্রি স্কুল জোন, পার্কিং নীতিমালা, মানসম্মত বাস সার্ভিস, স্কুল বাসসহ বিশেষায়িত বাস সার্ভিস, মানসম্মত ফুটপাত তৈরিসহ প্রভৃতি পরিকল্পনা কৌশল বাস্তবায়নের মাধ্যমে শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি কমানোর মাধ্যমে টেকসই পরিবহন ও যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
ব্যক্তিগত গাড়িমুক্ত দিবসকে সামনে রেখে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য না দিয়ে গণমুখী পরিবহন ব্যবস্থা সাজানোর উন্নয়ন দর্শন গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্র ও সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে আইপিডি।
বিএস/এলএম