নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) সফরে যাচ্ছেন। এ সফরে দেশটির সঙ্গে চার-পাঁচটি সমঝোতা চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। প্রধানমন্ত্রীর সফর সম্পর্কে জানাতে গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭-১২ মার্চ ইউএই সফর করবেন। ইউএইর উপরাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক মুহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম প্রধানমন্ত্রীকে গত বছর ৩ আগস্ট সে দেশে দ্বিপক্ষীয় সফরসহ দুবাই এক্সপো ২০২০, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ ডে’ হিসেবে পালন করার একটি প্রস্তাব ইউএইর ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় সেই সফর সম্ভব হয়নি। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে তিনি আবারো আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, করোনার কারণে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অপেক্ষমাণ ছিল। ইউএই আমাদের দেশের একটি বড় শ্রমবাজার। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এই একটি দেশ থেকেই বাংলাদেশে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে তা বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ইউএইতে করোনাকালে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরেও বাংলাদেশের জন্য তাদের শ্রমবাজার আংশিক খুলে দিয়েছে, যা আমাদের একটি কূটনৈতিক সাফল্য। গত অর্থবছরে করোনার সময়েই বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক সেখানে গিয়েছেন।
সফরে কী কী সমঝোতা সই হতে পারে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটা চূড়ান্ত নয়। তাই বলছি না। সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতির মাতা শেখ ফাতিমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ করবেন, যা একটি দুর্লভ সুযোগ। এছাড়া তিনি দুবাই এক্সপোতে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন ঘুরে দেখবেন, যেখানে গত বছর থেকে বাংলাদেশের গল্প, বাংলাদেশের সাফল্যগাথা সমগ্র বিশ্বের সামনে নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া সফরকালে প্রধানমন্ত্রী রাস আল খাইমায় বাংলাদেশী কমিউনিটি স্কুল ‘বাংলাদেশ ইংলিশ প্রাইভেট স্কুল’-এর নতুন ক্যাম্পাসে নির্মিতব্য ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
ইউএইর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ১৫০ কোটি ডলারের মতো ঘাটতি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর মূল কারণ হচ্ছে আমরা তাদের থেকে জ্বালানি তেল আমদানি করি। আমাদের রফতানির পরিমাণ সে দেশে আরো বাড়ানোর জন্য এ সফরে গুরুত্বারোপ করা হবে। সেজন্য বাংলাদেশের সঙ্গে ইউএইর সরাসরি জাহাজ চলাচল নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে ২৮ নাবিক ও হাদিসুরের মৃতদেহ নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হাদিসুরের মৃতদেহের সব অংশ একত্র করে নিরপদে রাখা রয়েছে। একটু সময় লাগবে ইউক্রেন থেকে ফেরত আনতে। বাকি ২৮ জন রোমানিয়ায় এসেছেন।
পাঁচ বাংলাদেশীকে ইউক্রেনে আটকে রাখা প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যত দূর জানা গিয়েছে যে এসব বাংলাদেশী রাশিয়ায় খেলা দেখতে গিয়েছিলেন। তাদের ইউক্রেনে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে অন্য কোথাও যাওয়া। ইউক্রেনে অবৈধভাবে যাওয়ায় দেশটির সরকার তাদের গ্রেফতার করেছে। তাদের ডিটেনশন সেন্টারে রেখে দিয়েছে। আর এখনো সেখানেই তারা রয়েছেন। এতটুকুই আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আরো তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করছি। বাংলাদেশীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয়নি।
ইউক্রেনে থাকা বাকি বাংলাদেশীদের নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, প্রথমে আমাদের কাছে তথ্য কম এসেছিল। সে অনুযায়ী অনেককে ফিরিয়ে এনেছি। ইউক্রেনের পাশের দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেছি বাংলাদেশীদের সাময়িক আশ্রয় দেয়ার জন্য। আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশীদের দেশে ফিরিয়ে আনব। এক হাজারের কিছু বেশি বাংলাদেশী সেখানে রয়েছেন। এর বেশির ভাগই ইউক্রেন থেকে বের হয়ে গিয়েছেন। আমাদের হিসাব মতে একশর মতো বাংলাদেশী বর্তমানে ইউক্রেনে রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামসসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসডি/ এফএস