নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর
রংপুরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে অন্তরঙ্গ ছবি ধারণ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার ঘটনায় গ্রেফতার ফাতেমা খাতুন তানিশাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বুধবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে রংপুর মহানগর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাজু আহমেদ জামিন নামঞ্জুর করে তানিশাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গ্রেফতার ফাতেমা খাতুন তানিশা রংপুর জেলা পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত পরিদর্শক হাবিবুর রহমানের স্ত্রী। তার গ্রামের বাড়ি বগুড়ার চেলোপাড়া। হাবিবুর কুড়িগ্রামের বাসিন্দা। চাকরি সূত্রে স্বামীর সঙ্গে রংপুরে আসেন স্ত্রী ফাতেমা খাতুন তানিশা।
কারাগারে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালতের ইন্সপেক্টর নাজমুল কাদের জানান, বিকেল ৪টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে আসামি ফাতেমা খাতুন তানিশাকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়। এ সময় তানিশার আইনজীবী জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আগামী ১২ জানুয়ারি জামিন শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করেন বিচারক। পরে আদালত থেকে আসামি তানিশাকে পুলিশ ভ্যানে করে রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রংপুর নগরের কলেজ রোড বীকন মোড় এলাকার একটি ছয়তলা ভবন থেকে ফাতেমা খাতুন তানিশাকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তানিশা ওই ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়ায় থাকতেন। সম্প্রতি রংপুর এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে প্রতারণার একটি অভিযোগ করেন। ওই মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, রংপুর এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলামের করা মামলায় তাকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন, প্রেমের ফাঁদে ফেলে অশ্লীল ছবি ধারণ করে প্রতারণার মাধ্যমে তানিশা তার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তানিশাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তানিশা এই চক্রের বেশ কিছু হোতা ও সদস্যদের তথ্য দিয়েছে। সেসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে গত রোববার (২ জানুয়ারি) রাতে রংপুর নগরের গ্র্যান্ড হোটেল মোড় এলাকার নিজ বাড়ি থেকে একই ধরনের প্রতারণার অভিযোগে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহারুখ করিম অনিক (৩৪) ও তার স্ত্রী আসমানী আক্তারকে (২৪) গ্রেফতার করে র্যাব-১৩। ওই দম্পতিসহ তাদের একটি চক্র নগরের বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে তাদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে কৌশলে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যেত।
এরপর সেখানে অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা আদায় করত। এ ছাড়া হত্যার ভয় দেখিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন কৌশলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। অভিযানের সময়ে তাদের ব্যবহৃত একটি টর্চার সেল থেকে দুটি চাপাতি, ইলেকট্রিক তার, মাদক সেবনের সরঞ্জামাদি, হাতুড়ি, ছুরি, স্ট্যাম্প, ভিডিও ধারনের দুইটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান র্যাব-১৩-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মাহমুদ বশির আহমেদ।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় গ্রেফতার ওই দম্পতি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালত তাদের দুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
বিএসডি/এসএ