স্পোর্টস ডেস্ক
উড়তে থাকা বাংলাদেশ দলকে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচের প্রথম দিনে রীতিমতো মাটিতে টেনে নামাল নিউজিল্যান্ড। মাউন্ট ম্যাঙ্গানুই টেস্ট জয়ের পর প্রশংসা বন্যায় ভেসেছেন টাইগার বোলাররা। পেসারদের জন্য সহায়ক ক্রাইস্টচার্চে দেখা মিললো ভিন্ন এক চিত্রের। নখদন্তহীন বোলিংয়ে হতশ্রী পারফরম্যান্স তাসকিন আহমেদ, এবাদত হোসেনদের। রোববার দ্বিতীয় ম্যাচের প্রথম দিনটি লেখা হলো শুধুই স্বাগতিকদের নামে।
এদিন ৯০ ওভার ব্যাট করে স্কোর বোর্ডে প্রায় সাড়ে তিনশর মতো রান জমা করেছে নিউজিল্যান্ড। গোটা দিনে হারিয়েছে মোটে ১ উইকেট। অথচ ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে প্রথম ইনিংসে গড়ে হয়ই মাত্র ২৬০-২৭০ রান হয়। বলা যায়, ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছুটিয়েছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। অধিনায়ক টম লাথাম সামনের থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গড়েছেন একাধিক রেকর্ড।
লাথাম নিজে হাঁটছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ডাবল শতকের দিকে। ১ রানের জন্য সেঞ্চুরির অপেক্ষায় আছেন ডেভন কনওয়ে। প্রথম দিন শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান করেছে ব্ল্যাকক্যাপসরা। ডাবলের অপেক্ষায় থাকা লাথাম ১৮৬ এবং কনওয়ে ৯৯ রান নিয়ে আগামীকাল (সোমবার) টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
দিনের প্রথম সেশনে কোন উইকেট না হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ৯২ রান তুলে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা। বিরতি কাটিয়ে ফিরে ওপেনার উইল ইয়ংয়ের সহজ ক্যাচ ছাড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। ইবাদতের বলে ইয়ংয়ের ব্যাট ছুঁয়ে বল যায় উইকেটের পেছনে। প্রথম স্লিপে যা সহজ ক্যাচ হতে পারত নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। কিন্তু দ্বিতীয় স্লিপ থেকে ডাইভ দিয়ে ধরতে গিয়ে তা ফেলে দেন লিটন দাস। পরে ওভারথ্রো থেকে ওই বলে আসে ৭ রান!
যদিও পরে ইয়ংকে আইট করেন শরিফুল ইসলাম। তবে তার আগে উদ্বোধনী জুটিতে লাথাম-ইয়ংয়ের ব্যাটে আসে রেকর্ড ১৪৮ রান। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে শতরানের জুটি একেবারে দুর্লভ। লাথাম-ইয়ংয়ের আগে সর্বশেষ যেটি দেখা গিয়েছিল ২০১২ সালে। ক্রাইস্টচার্চে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে শত রানের উদ্বোধনী জুটি এবারই প্রথম।
দ্বিতীয় সেশনে ইয়ংকে পয়েন্টে অভিষিক্ত নাঈম শেখের হাতে তালুবন্দি করিয়ে সাজঘরে পাঠান শরিফুল। ১১৪ বলে ৫৪ রান করে ডানহাতি ওপেনার আউট হন। শরিফুলের লাফিয়ে উঠা পয়েন্ট দিয়ে উড়াতে চেয়েছিলেন ইয়ং। টাইমিংয়ে গড়বড় করায় বল যায় সোজা নাঈমের হাতে। ইয়ং ফিরে গেলেও টলানো যায়নি লাথামকে। মাত্র ১৩৩ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। পরে কনওয়ের সঙ্গে জুটি বেধে দলীয় স্কোর ২০২ রানে চা বিরতি যান এই বাঁহাতি।
লাথাম ১১৮ এবং কনওয়ে ২৮ রান নিয়ে শুরু করেন দিনের তৃতীয় ও শেষ ওভারের খেলা। এই সেশনে ৩৪ ওভার ব্যাট করে দুজন যোগ করেন আরো ১৪৭ রান। অবিচ্ছেদ্য ২০১ রানের পার্টনারশিপে টাইগার বোলারদের কোন সুযোগই দেননি দুজন। ৮০ ওভার পর নতুন বল হাতে নিয়েও ফায়দা করতে পারেননি সফরকারী বোলাররা। আগের ম্যাচের নায়ক এবাদত হোসেন যেন আজ ‘চ্যারিটি’ খুলে বসেছেন, রান বিলিয়েছে দুহাতে! কম যাননি মিরাজ-তাসকিনরাও।
তৃতীয় সেশনে ব্যক্তিগত দেড়শ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন লাথাম। দিনের খেলা শেষে ১৮৬ রানে অপরাজিত তিনি। ২৭৮ বলে ইনিংসে কোনো ছয়ের মাত্র না থাকলেও চার হাঁকিয়েছেন ২৮টি। অন্যদিকে ৯৯ রানে নিয়ে ব্যাট করা কনওয়ে খেলেছেন ১৪৮ বল। ১০টি চারের সঙ্গে তার ইনিংসে ছক্কা আছে ১টি।
বল হাতে সবচেয়ে খরুচে এবাদত। ২১ ওভার হাত ঘুরিয়ে দিয়েছেন ১১৪ রান। ২৫ ওভারে ৯৫ রান খরচ করে উইকেটশূন্য মিরাজ।
এদিন টস জিতে আগে বোল করার ফায়দা নিতে পারেনি বাংলাদেশি বোলাররা। আগামী সকালের সেশনটা নিজেদের করে ম্যাভে ঘুরে দাঁড়াতে চাইবেন সফরকারীরা। এই ম্যাচটি কোনরকম ড্র করতে পারলেও ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পাবে বাংলাদেশ দল।
বিএসডি/এসএ