জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
নারী শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অনেক আশার দিক। পাকিস্তান আমলে নারী শিক্ষা ছিল ‘হারাম’। এখন কিন্তু বাংলাদেশে সে অবস্থা নেই। ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশে শিক্ষায় নারী-পুরুষ সমতা এসেছে। বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেজন্য নারীদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য।
‘আমি নারী ডিজিটাল (আনাডি)’ গ্র্যান্ড মিট আপ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. ফসিউল্লাহ।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও জয়তুন রেস্টুরেন্টে (আইডিবি ভবনের বিপরীত পাশে) আনাডি গ্র্যান্ড মিট আপ ২০২১ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
আনাডির প্রতিষ্ঠাতা শাব্বীর আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. ফসিউল্লাহ বলেন, ছোটবেলায় পানিকে কী বলতাম তা মা প্রথম শিখিয়েছে। নারীই প্রথম শিক্ষক।
নারীর নিজের যা কিছু কীর্তি, কৃতিত্ব তার সব কিছুতেই রয়েছে চ্যালেঞ্জ। নারীর সফলতার অনেক গল্প আছে। যদিও শুধু ব্যর্থতার গল্পই প্রচার পায় বেশি। আইটিতে লেখাপড়া করেই যে সফলতা আসবে ব্যাপারটা এমন নয়। অথচ শুধু সাইন দেখে দেখে আজ শিশুরাও প্রযুক্তি শিখে ফেলছে। কোভিড সময়ে পুরো বিশ্ব লণ্ডভণ্ড। কিন্তু কোনো কিছু কি থেমে ছিল? থামেনি।
প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণার পর ২/৩ বছর অনেক হাসি শুনেছি। বিদ্যুৎ চলে গেলেও কটু কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু এখন! বাংলাদেশ ডিজিটাল রূপ নিয়েছে। এই সুযোগটা উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের নিতে হবে। ইংরেজরা শাসন করেছে নিজেদের স্বার্থে। এখন সে শাসন নেই। কে উপরে কে নিচের পোস্টে কাজ করছে সেটা বড় নয়, কাজটাই সম্মানের।
তিনি বলেন, স্বপ্ন দেখতে হবে বড়। মানুষ কতো বড়? স্বপ্ন যতো বড়। মানুষ আসলে স্বপ্নের সমান বড়।
‘পাঠাও’ ‘উবার’ যখন বাজারে আসে অনেকে হিসেবই মেলাতে পারেনি। নতুন কোনো গাড়িও তাদের কিনতে হয়নি। অথচ তারা সফল ব্যবসা করে যাচ্ছে।
‘যা করা, এখনই তা শুরু করতে হবে। পাস-ফেল পরে। কিন্তু শুরু যদি করা না হয় তাহলে ফেলও করা সম্ভব হবে না। পাঁচ বছর পর শুরু করলে ফেলও করবেন পরে। তাই এখনই উদ্যোগী হন। নিজের অবস্থান জেনে যাবেন। সফল আপনিই হবেন।’
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন কোভিডে হারবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ হারেনি। এগিয়ে যাচ্ছে। আপনাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। থেমে গেলে চলবে না। বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান নারীর। নারীই প্রতিটি সফল মানুষের প্রথম শিক্ষক। নারী আজ নিজেও উদ্যোক্তা। বাংলাদেশের নারীর যে ধৈর্য, আরও অনেক দিন এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে আনাডি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জীবন বীমা কর্পোরেশনের জেনারেল ম্যানেজার (উপ-সচিব) আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান বলেন, মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তারা যদি উদ্যোক্তা হয়ে ওঠে, নিজেদের অবস্থান কিছু না কিছু করে, তাহলে দেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্ভব কাঙ্ক্ষিত এসডিজি অর্জন করবে।
তিনি বলেন, প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি সফল আনাডি। ডোমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনাল চাহিদা পূরণে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এজন্য আসলে টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু চেষ্টা ও উদ্যোগ থাকলে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাসলে বাংলাদেশ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর্কিটেক্ট শারমিন আফরোজ সুমি বলেন, উদ্যোক্তা হতে হলে আগে ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। যেকোনো সমস্যা সমাধানে উদ্যোক্তা ভাবে আমার কী করা উচিত? সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাবার পজিটিভ মানসিকতাই নারী উদ্যোক্তাদের চালিকা শক্তি। নারীদের অনেকে সমালোচনা করে। বলে স্টার জলসা দেখে আর প্যাঁচ লাগায়। অথচ আমাদের নারী উদ্যোক্তারা সেখানে ভিন্ন চিন্তা করে। নতুন নতুন ভাবনায় পজিটিভ কিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সেবার মানসিকতাই বেশি, যেটা বেশি প্রয়োজন। এই ব্যবসা করে আপনি কখনো কোটিপতি হয়তো হবেন না, কিন্তু অনেককে নিয়ে কাজ করতে পারবেন। নিজের মতো করে ব্যবসা করতে পারবেন।
নারী উদ্যোক্তাদের সমস্যা হলো ‘যাইতে পারবা না, খাইতে পারবা না, তুমি কি পারবা’!! নানা সমস্যার কথা শুনতে হয়। বলা হয় বৃদ্ধ বাবাই সব করবে। ছেলেটা বসে বসে গেম খেলে। মেয়েটাও তাই। রান্নাও শিখছে না।
‘অথচ বাড়ির দায়িত্বই যদি নিতে না পারেন, তবে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন। যেসব নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠছেন তাদের পেছনের দিকে তাকালে দেখবেন তাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু করার অভিজ্ঞতা আছে। খুব বেশি মেধাবীরা টিচিংএ যাচ্ছেন, কিন্তু যারা লেখাপড়ার পাশাপাশি কিছু না কিছু করেছেন তারা বেশি সফল হচ্ছেন।’
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্টজোস-এর নেটওয়ার্ক ইনকর্পোরেট প্রিন্সিপাল ইঞ্জিনিয়ার মো. জিয়াউল আলম বলেন, নিজে ডিজিটাল হলে ডিজিটাল প্লাটফর্মে বেশি সফল হবেন নারী উদ্যোক্তারা।
তিনি বলেন, মার্কেটিং করার ক্ষেত্রে টেকনোলজির ব্যবহার ব্যবসায় গতি এনেছে। আর ল্যাঙ্গুয়েজ স্কিল থাকতে হবে। তবে নিজেকে সেরাদের স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এই সুযোগগুলো নিতে অনেক প্রোগ্রাম হচ্ছে অনলাইনে। নিজেকে এক্সপ্লোর করতে হবে। যারা জব করেন তারা জব করেও উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হতে পারেন। সেজন্য ক্লাউড বেইজড হতে হবে। শুধু আপনার এনার্জি থাকতে হবে। লেগে থাকলে সবই সম্ভব।
অনুষ্ঠানে সেরা আনাডি উদ্যোক্তা হিসেবে পাঁচজনকে পুরস্কৃত করা হয়। তারা হলেন রোবায়েত ফ্যাশন হাউজের রোবায়েত রজনী, মনীপুরি কুঠুরীর (রাঙামাটি) উদ্যোক্তা সায়মা ফেরদৌস, ক্লাসি ড্রেস গ্যালারির জামিলা মুন্নি, দেবু দা-র ঘি’র দেবব্রত ঘোষ ও জিনাত কেয়ারের এসএফ জিনাত।
অনুষ্ঠান শেষে একই স্থানে শুরু হয় উদ্যোক্তা ও স্পন্সরদের প্রোডাক্ট ডিসপ্লে, লাইভ এবং মেহেদী উৎসব। বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে আনাডি গ্র্যান্ড মিট আপ ২০২১।