বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে আশুলিয়া, সাভার ও ধামরাই শিল্পাঞ্চলের ১৩০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (১১ নভেম্বর) কারখানাগুলোর প্রবেশপথে বন্ধের নোটিশ দেখা গেছে।
শিল্প পুলিশের সুপারিন্টেনডেন্ট মো. সারওয়ার আলম জানান, ‘সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের ১৩০ টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’ সরেজমিনে দেখা গেছে, শিল্প এলাকাগুলোর বেশির ভাগ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে।
মূল বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন পোশাক শ্রমিকরা। গত ৭ নভেম্বর পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও পোশাক শ্রমিকরা এই মজুরি কাঠামো প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত দুই সপ্তাহে শ্রমিকদের বিক্ষোভের ফলে অন্তত চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শিল্প নগরী গাজীপুরের পাশাপাশি ঢাকায় এখনো বিক্ষোভ চলছে।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনিয়ন নেতা প্রদীপ রায় বলেন, ‘বারবার বেশি মজুরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন।’
সারা বিশ্বে বাংলাদেশ তার পোশাক শিল্পের জন্য সুপরিচিত। এটি দেশের জিডিপির প্রায় ১৬ শতাংশ বা ৯৩ বিলিয়ন (নিউজিল্যান্ড ডলার সমান) অবদান রাখে এবং এতে আরও অবদান রাখে দেশটির মোট ৩ হাজার ৫০০টি কারখানার প্রায় চার মিলিয়ন শ্রমিক। এছাড়া, বাংলাদেশ এইচ অ্যান্ড এম, অ্যাডিডাস এবং গ্যাপ সহ কয়েকটি বড় বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র।
দেশের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হওয়া সত্ত্বেও গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা দীর্ঘদিন ধরে নিম্ন মজুরি ও কর্ম পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছেন। যদি মজুরি বাড়ানো হয় তা হবে ২০১৮ সালের পর এই প্রথম।
পোশাক শিল্প বিপজ্জনকও হতে পারে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনা। যেখানে পাঁচটি পোশাক কারখানার আটতলা ভবনটি প্রকৌশল জনিত সমস্যার কারণে ধসে পড়ে। এতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। এটিই শেষ নয়। গত ২০ বছরে ২৬টি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অন্তত দুই হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। গার্মেন্টস কারখানার অবস্থার এই উন্নতিতে সহায়তা করেছে রানা প্লাজার দুর্ঘটনাটি। কারণ ব্যাপারটি কঠোর বিধিবিধান এবং নিরাপত্তা পরিদর্শকদের নিবিড় তদারকি আনা হয়েছিল। কিন্তু এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বেতন বাড়ানোর বিষয়টি।
তবে ১০ই নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের এই সংঘর্ষ নিয়ে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, মজুরি বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত মজুরিতে কাজ করতে হবে আর নয় গ্রামে ফিরে যেতে পারেন আপনারা।
বিএসডি/ এফ এ