নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাজারে বাহারি রঙের প্রচুর ফুল। তারপরও দাম চড়া। পাইকারি বাজারে প্রতিটি গোলাপ মান ভেদে ৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ১৫ থেকে ২৫ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮ থেকে ২০ টাকা ও রজনীগন্ধা ৫ থেকে ১০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে।
এ ছাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদা ফুল। আর খুচরা বাজারে একই ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে।
খুচরা বাজারে প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ৩০ টাকা, জারবেরা ২০ থেকে ৪০ টাকা, গ্লাডিওলাস ২০ থেকে ৩০ টাকা ও রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ১০ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো তোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে দুই হাজার টাকায়।
মঙ্গলবার সরেজমিন রাজধানীর শাহবাগের পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ফুল দোকানে তুলেছেন। বিভিন্ন স্থানের স্থায়ী ও ভাসমান ফুল ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন শাহবাগের দোকানগুলোতে। ব্যবসায়ী ছাড়াও সাধারণ মানুষ আগে থেকে ফুল কিনতে এসেছেন। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫ থেকে আসা মৌসুমি ফুল বিক্রেতা মো. সালাউদ্দিন বলেন, ১৩ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে আগে থেকেই ফুল সংগ্রহের প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিক্রি হবে কিনা জানি না। তবে লোকজন যদি রাস্তায় বের হয় তাহলে বিক্রি ভালো হওয়ার আশা করছি। তিনি বলেন, ‘বাজার ঘুরে দেখছি। দামে পছন্দ হলে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ফুল কিনব।’
কয়েক বছর আগেও দেশে ফুলের বাজারে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় ও আমদানি করায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, কালো গোলাপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, প্লামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। দামও হাতের নাগালে। কিন্তু বিশেষ দিনগুলোতে ফুলের চাহিদা থাকায় অতি মুনাফার লোভে বেশি দামে ফুল বিক্রি করেন বিক্রেতারা।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও শাহবাগের অনন্যা পুষ্প বিতানের মালিক লোকমান হোসেন বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীর শাহবাগসহ অন্যান্য ফুল বাজারে ট্রাকভর্তি ফুল আসতে শুরু করেছে। কিন্তু বিধিনিষেধের কারণে বেচাবিক্রি নিয়ে শঙ্কায় আছি। তিনি বলেন-পহেলা ফাগুন, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সাধারণত ফুল বেচাকেনাও জমে উঠত। করোনার কারণে গত বছর ফুল ব্যবসা ভালো যায়নি। এ এবারও ব্যবসা ভালো না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, সারা বছর ফুল বিক্রি ভালো হয়। তবে পুরো বছরের তুলনায় এ তিন দিবস- বসন্তবরণ, বিশ্ব ভালোবাসা ও মাতৃভাষা দিবসে ফুল বিক্রি বেড়ে যায়। মূলত এ তিন দিবস ঘিরে ফুল বাণিজ্য চাঙা হয়ে ওঠে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর দেশে ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত দুই বছরও ফুল উৎপাদন ভালো হয়েছে। কিন্তু বিক্রি ভালো হয়নি। পাশাপাশি দেশে আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ কারণে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তাই এবারও এই তিন দিবস ঘিরে ফুল বাণিজ্য নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধ। সরকারের পক্ষ থেকে ভিড় এড়িয়ে চলাচলের কথা বলা হয়েছে। এ কারণে এবার লোকসমাগম কতটা হবে, তা বলা যাচ্ছে না। তবে তিন দিবস ঘিরে ফুল বাণিজ্যের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।
তিনি জানান, সর্বশেষ ২০১৯ সালে বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দেশে মোট ২০০ কোটি টাকা ফুল বাণিজ্যের টার্গেট ধরা হয়েছিল। এ বছরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় কোনো বিক্রির টার্গেট ধরা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের আগে শুধু যশোরের গদখালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফুল বাণিজ্য হতো। বাকি ১৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য রাজধানীর শাহবাগ ফুলের বাজারসহ দেশের অন্যান্য স্থান পূরণ করত।