জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
পরিবহন ধর্মঘটের তৃতীয় দিন রোববারও রাজধানীর পথে পথে মানুষের ভোগান্তি স্পষ্ট। গণপরিবহন না থাকার ভোগান্তির সঙ্গে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার আধিক্যে সড়কে যুক্তে হয়েছে তীব্র যানজটের ভোগান্তিও। সঙ্গে ইচ্ছেমতো ভাড়া চাওয়া তো রয়েছেই।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর, কল্যাণপুর, আগারগাঁও, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, মহাখালী, কলেজগেট, সায়েন্সল্যাব, নিউ মার্কেট, শাহবাগ, প্রেসক্লাব ও কাকরাইল এলাকায় দেখা যায় তীব্র যানজট।
যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন গন্তব্যে
মোড়ে মোড়ে যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর এ সুযোগে নির্ধারিত ও স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া হাঁকছেন সিএনজি, রিকশা ও মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা চালকেরা।
আগারগাঁও এলাকায় আজিবুর সজিব নামে এক বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, অফিসের বাসে চলাচল করতাম। কিন্তু আজ তীব্র যানজটের কারণে বাস শেওড়াপাড়ায় পৌঁছাতেই পারেনি। বাধ্য হয়ে হেঁটে আসি আগারগাঁও মোড়ে। কিন্তু এখানে তীব্র যানজট। কোনো সিএনজি বা মোটরসাইকেলে চেপে যে গন্তব্যে যাব সে অবস্থাও নেই। পুরো সড়ক যেন ‘কলাপস’ হয়ে আছে।
কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা আর সিএনজিচালিত অটোরিকশার আধিক্যে সড়কে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট।
কলাবাগান এলাকায় কথা হয় গেন্ডারিয়ার একটি দোকানের মালিক মেহেরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, বাসা থেকে প্রতিদিন ব্যক্তিগত গাড়িতেই বের হই। আজও বের হয়েছি, কিন্তু ধানমন্ডির বাসা থেকে কলাবাগান পার হতে পারিনি এখনো, অথচ একঘণ্টা পেরিয়ে গেছে এরই মধ্যে। সামনে গাড়ির দীর্ঘ সারি। মূল সড়কে রিকশা, লেগুনা সবই চলছে। জানি না আজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারব কি না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আত্মীয় ভর্তি। সেখান থেকে তিনদিন পর আজ উত্তরায় বাসায় ফিরবেন ভেবে বের হয়েছিলেন আবুল কালাম। তিনি বলেন, ধর্মঘটের কারণে বাস মিলছে না। ৩৫০ টাকার বিপরীতে উত্তরা যেতে ৭০০ টাকা চাইছে সিএনজি চালক। মোটরসাইকেল চালকও অ্যাপে যাচ্ছে না। খ্যাপে চাইছে ৫০০ টাকা। বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকায় মালবাহী একটি পিকআপে উঠেছি।
গণভোগান্তি কমাতে বিআরটিসি অতিরিক্ত বাস নামিয়েছে।
তিনি বলেন, পুরো নগরে স্থবিরতা, অরাজকতা বিরাজ করছে। কোনো কিছুরই যেন সুরাহা হয় না এই নগরীতে। ধর্মঘটে যাত্রী ভোগান্তি। তার ওপর বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনা। তবুও যে গন্তব্যে সঠিক সময়ে পৌঁছাব তার কোনো গ্যারান্টি নেই। গণপরিবহন ছাড়া ঠাসা সড়কে থেমে থেমে চলছে সব গাড়ি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার(ট্রাফিক) মো. মুনিবর রহমান বলেন, সড়কে গণপরিবহন চলছে না। গণভোগান্তি কমাতে বিআরটিসি অতিরিক্ত বাস নামিয়েছে। রেন্ট-এ কার অনেক নেমেছে। মূল সমস্যা তৈরি করছে রিকশা। যাত্রী নিয়ে অলি-গলি ছাপিয়ে মূল সড়কে চলে এসেছে অধিকসংখ্যক রিকশা। এর বাইরে প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত গাড়ি তো আছেই। যে কারণে সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও চাপ কমেনি। তাছাড়া এলোমেলো রাস্তা পারাপার তো আছেই। সব মিলিয়ে সকাল থেকে নগরজুড়ে যানজট লেগে আছে। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে যানজট নিরসনে চেষ্টা চলছে। রিকশা মূল সড়কে চলাচল বন্ধ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীদের ভোগান্তি ও চাহিদাও বিবেচনা করতে হচ্ছে।
বিএসডি / আইকে