করোনা মহামারির মধ্যে হুট করে কোপা আমেরিকা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রাজিল। ব্যাপারটি নিয়ে ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা খেপেছেন। কিন্তু মাঠের বাইরের কোনো কিছুই মাঠের খেলায় প্রভাব রাখেনি। ইকুয়েডরের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। গোল করেছেন নেইমার আর রিচার্লিসন। পোর্তো আলেগ্রের এই জয় দিয়ে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলা পাঁচ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয় তুলে নিল তারা।
৪-৩-৩ ছকে মাঠে নেমেছিল ব্রাজিল। লিভারপুলের গোলকিপার আলিসনের সামনে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে জুটি বেঁধেছিলেন পিএসজির মার্কিনিওস ও রিয়াল মাদ্রিদের এদের মিলিতাও। দুপাশে দুই ফুলব্যাক হিসেবে খেলেছেন জুভেন্টাসের দানিলো (রাইটব্যাক) ও অ্যালেক্স সান্দ্রো (লেফটব্যাক)।
মিডফিল্ডার হিসেবে অধিনায়ক কাসেমিরোর সঙ্গে খেলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফ্রেড ও অলিম্পিক লিওঁর লুকাস পাকেতা। আক্রমণভাগে নেইমারকে বাঁয়ে রেখে মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন ফ্লামেঙ্গোর গাব্রিয়েল বারবোসা। রাইট উইঙ্গার হিসেবে খেলেছেন রিচার্লিসন।
ইকুয়েডর যেন প্রথম থেকেই খোলসবদ্ধ রেখেছিল নিজেদের। তার মানে এই নয় যে ব্রাজিল দুর্দান্ত খেলছিল। বহুদিন পর মূল একাদশে খেলতে নামা গাব্রিয়েল সুযোগ পেয়েছেন বেশ কয়েকটা, কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি। এর মধ্যে রিচার্লিসনের ক্রস থেকে গাব্রিয়েলের কল্যাণে ৪১ মিনিটে একটা গোল এসে গেলেও অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।
প্রথমার্ধের নিষ্প্রাণ পারফরম্যান্সের পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিল-কোচ তিতে কৌশলগত কিছু পরিবর্তন আনেন। প্রথমার্ধে বাজে খেলা ফ্রেডকে উঠিয়ে ম্যানচেস্টার সিটির স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে মাঠে নামান তিনি। আর এই একজনই চেহারা পাল্টে দেন ব্রাজিলের খেলার।
ওপরে একক স্ট্রাইকার হিসেবে গাব্রিয়েল বারবোসাকে রেখে লেফট উইংয়ে চলে আসেন রিচার্লিসন, ‘নাম্বার টেন’ এর ভূমিকায় খেলা শুরু করেন নেইমার। রিচার্লিসনের ফেলে আসা রাইট উইংয়ে চলে আসেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। মাঝমাঠে লুকাস পাকেতা অনেকটা ‘ডিপ লায়িং প্লেমেকারের’ ভূমিকা নিয়ে খেলা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন।
ব্রাজিলের এই নতুন কৌশলের জবাব জানা ছিল না ইকুয়েডরের। অবশেষে ৬৫ মিনিটে গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। আক্রমণাত্মক মিডফিল্ড পজিশন থেকে নেইমারের কাছ থেকে বল নিয়ে ডি-বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে শট নেন রিচার্লিসন। আটকাতে পারেননি ইকুয়েডরের গোলকিপার আলেক্সান্দার দমিঙ্গেস।
ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। নেইমারের শট দমিঙ্গেস আটকে দিলেও ভিএআরের মাধ্যমে দেখা যায়, পেনাল্টি নেওয়ার সময় নিজের লাইন ছেড়ে অনেকটাই এগিয়ে এসেছিলেন ইকুয়েডরের এই গোলকিপার। ফলে আবারও ব্রাজিলকে পেনাল্টি নেওয়ার সুযোগ করে দেন রেফারি।
নেইমার এবার আর ভুল করেননি। এই নিয়ে বাছাইপর্বে চার গোল হয়ে গেল তাঁর। বাছাইপর্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন এ তারকা। সব মিলিয়ে ব্রাজিলের জার্সি গায়ে ১০৪ ম্যাচে ৬৫ গোল হয়ে গেল নেইমারের। এই সময়ে গোলে সাহায্য করেছেন ৪৫ বার। এই দুই তালিকায় নেইমারের ওপরে আছেন শুধুই পেলে।
দুই গোলেই ভূমিকা রাখা নেইমার যে কতটা দুর্দান্ত খেলেছেন, সেটা না বললেও চলছে। ৭৮ শতাংশ সফল পাসেই তিনি সফল। এর পাশাপাশি ড্রিবলিং চারবার, ক্রস করেছেন দুইবার। ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকাকে পাঁচবার ফাউল করে ইকুয়েডর বুঝিয়েছে, তাঁদের মূল কৌশল কী ছিল। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি!
ওদিকে ধীরে ধীরে ব্রাজিলের মূল একাদশের সেন্টারব্যাক হিসেবে মার্কিনিওসের পাশে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলছেন রিয়াল মাদ্রিদের মিলিতাও। পেছন থেকে তিনি সফল পাস বাড়িয়েছেন ৭৫টি— হার ৯৫.৪ শতাংশ। সফল ট্যাকল সাতটি; পেছন থেকে লম্বা করে বলও দিয়েছেন চারবার। ক্লিয়ার করে দলকে বিপদমুক্ত করেছেন দুইবার।
তবে গ্যাব্রিয়েল জেসুস বুঝিয়েছেন, তাঁকে সব সময় স্ট্রাইকার হিসেবে মনে করা হলেও আসলে উইংয়েই বেশি কার্যকর তিনি। জেসুস নামার পর থেকেই ব্রাজিলের খেলার ধার বেড়েছিল অনেকটাই। এ সময় তারা দ্রুত আক্রমণে উঠতে পেরেছে অনেকবারই। দ্বিতীয়ার্ধে সহজ কিছু সুযোগ নষ্ট না করলে ব্রাজিল আরও কয়েকটা গোল পেতে পারত।
আগামী মঙ্গলবার প্যারাগুয়ের বিপক্ষে আসুনসিওনে খেলতে নামবেন নেইমাররা। সে ম্যাচে ৪-২-৩-১ ছকে প্রথম থেকেই জেসুস রাইট উইঙ ও রিচার্লিসন লেফট উইংয়ে খেললে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই!