ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। গত ৭০ দিনের মধ্যে সবচেয়ে কম সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। আজ শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮৪ হাজারের বেশি। খবর এনডিটিভির।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, পাঁচ দিন ধরে ভারতে সংক্রমণ এক লাখের নিচে রয়েছে। দেশটিতে মোট সংক্রমণ ২ কোটি ৯৩ লাখের বেশি।
সংক্রমণ কমে এলেও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন চার হাজারের বেশি করোনা রোগী। এ নিয়ে দেশটিতে মারা গেলেন ৩ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি। ভারতে ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যাঁরা মারা গেছেন, তার একটি বড় অংশ মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। এ রাজ্যে মারা গেছেন দুই হাজারের বেশি মানুষ।
এদিকে দেশটিতে করোনা সংক্রমণের হারও কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এদিন তামিলনাড়ুতে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। কেরালায় ১৪ হাজার, কর্ণাটকে ৮ হাজার এবং মহারাষ্ট্রে ১১ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন।
ভারতজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ১৮ বছরের বেশি বয়সী সবাইকে বিনা মূল্যে টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ২১ জুন থেকে এ লক্ষ্যে সব রাজ্য সরকারকে বিনা মূল্যে টিকা সরবরাহ করা হবে। করোনা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নেয় ভারত। ভারতে গতকাল পর্যন্ত ২৪ কোটি ৬০ লাখের বেশি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানলে প্রায় দুই মাস আগে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। এখন সংক্রমণ কমতে থাকায় সতর্কতার সঙ্গে বিধিনিষেধ শিথিল করার প্রক্রিয়া চলছে।
গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়তে থাকে। গত মাসে ভারতে এক দিনে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ১৪ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়।
গত ৪ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়। গত ২৩ মে করোনায় মৃত্যু তিন লাখের মাইলফলক ছাড়ায়।
৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হন।
৭ মে ভারতে প্রথম এক দিনে করোনায় চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারপর একাধিক দিন দেশটিতে চার হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ৯ জুন দেশটিতে রেকর্ড ছয় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড ভারতের দখলে। ২২ এপ্রিলের আগে পর্যন্ত এই রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পরই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। আর মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পরই রয়েছে ভারত।
ভারতে সংক্রমণ ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। করোনার ভারতীয় ধরনগুলোর মধ্যে একটিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বিবেচনা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।