নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রথিতযশা ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী হামিদুজ্জামান খানের প্রথম জানাজা রোববার (২০ জুলাই) আসরের নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে নামাজে জানাজা শেষে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার সহশ্রাম গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।
এর আগে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে হামিদুজ্জামান খানের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে আনা হয়।
হামিদুজ্জামান খানের সহধর্মিণী ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী আইভি জামান গণমাধ্যমকে জানান, গত ১৭ জুলাই তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখান থেকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার পর আজ সকালে মারা যান তিনি।
তিনি আরো বলেন, হামিদ আঁকাআঁকি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছিল। খুব শৃঙ্খলার সঙ্গে তিনি জীবনযাপন করতেন। তার কোনো কঠিন অসুখ ছিল না। তার গ্রামের বাড়িতে মিউজিয়াম স্থাপনের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছিলেন। এভাবে হামিদের চলে যাওয়া আমার জন্য খুবই বেদনাদায়ক।
ভাস্কর হামিদুজ্জামান সকাল ১০টা ৭ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি মৃত্যুকালে স্ত্রী ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী আইভি জামান, দুই পুত্র কপার ও অব্যয়সহ অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে হামিদুজ্জামান খান ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন। প্রখ্যাত এই শিল্পীর একক প্রদর্শনী হয়েছে ৪৭টি।
তার স্মারক ভাস্কর্যগুলো তাকে বাঙালির হৃদয়ে চিরদিন অমর করে রাখবে। আশুগঞ্জ সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’ এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে ‘বিজয় কেতন’ তার বিখ্যাত কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও ইউনাইটেড হাসপাতালের বিভিন্ন স্থান জুড়ে রয়েছে তার সৃষ্টিকর্ম।
ভাস্কর্যের পাশাপাশি তিনি জলরং, তেলরং, অ্যাক্রিলিক এবং স্কেচ মাধ্যমে সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার ভাস্কর্যে পাখি বিষয়টি বেছে নেওয়া ছিল যুগোপযোগী। ঢাকার বুকে ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতের তৈরি বেশ কিছু পাখির ভাস্কর্য শিল্প জগতে তার স্বাতন্ত্র্যের সাক্ষ্য বহন করে।