প্রযুক্তি ডেস্ক:
তাহলে কি এলিয়েনদের অস্তিত্ব সত্যিই আছে? তারাই কি মানুষের কাছে বার্তা পাঠাচ্ছে? ভিনগ্রহীরা কি ই বা জানাতে চাচ্ছে? এমন নানান প্রশ্ন আর দ্বিধাদ্বন্দ্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কে বা কারা পাঠাচ্ছে এই রহস্যময় রেডিও তরঙ্গ, যা আসছে এই ব্রহ্মাণ্ডে আকাশগঙ্গা ছায়াপথ (মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সি)-এর কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি কোনো জায়গা থেকে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই রেডিও তরঙ্গ বা আলোর ঝলক একটানা বেরিয়ে আসছে না। টানা কয়েক সপ্তাহ বা মাস কয়েক পর সেই আলোর ঝলক আর দেখা যাচ্ছে না। তা খুব দ্রুত উধাও হয়ে যাচ্ছে। আবার কয়েক মাস পর সেই ঝলক ফিরে আসছে মহাকাশে। তবে যখন তা দেখা যাচ্ছে, তখন তা খুবই শক্তিশালী। অত্যন্ত জোরালো। আর তা মহাকাশের শুধু একটি দিক থেকেই আসছে। যেন কে বা কারা সেই দিকটি থেকেই পাঠাচ্ছে সেই আলোর ঝলক। যে আলো বেরিয়ে আসছে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রের কাছাকাছি, তা আবার দৃশ্যমান আলো নয়। তবে সেই আলো রয়েছে আমাদের পরিচিত আলোক বর্ণালীরই একটি অংশে। যার নাম রেডিও তরঙ্গ। যা শুধু ধরা পড়ে অত্যন্ত শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপেই।
আলোক বর্ণালীর একটি প্রান্তে রয়েছে গামা রশ্মি, এক্স রশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মি। মাঝখানে রয়েছে দৃশ্যমান আলো। যার মধ্যে রয়েছে লাল থেকে বেগুনি সাতটি রং। আলোক বর্ণালীর অন্য প্রান্তে রয়েছে রেডিওতরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, অবলোহিত রশ্মি (ইনফ্রারেড রে) ও নিয়ার ইনফ্রারেড রশ্মি। এই বর্ণালীতে তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম (কম্পাঙ্ক সবচেয়ে বেশি) গামা রশ্মির। তার পরে রয়েছে এক্স রশ্মি ও অতিবেগুনি রশ্মি ও দৃশ্যমান আলো। আর এই বর্ণালীতে তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বেশি (কম্পাঙ্ক সবচেয়ে কম) রেডিও তরঙ্গের। তার পর রয়েছে যথাক্রমে মাইক্রোওয়েভ, অবলোহিত রশ্মি (ইনফ্রারেড রে) ও নিয়ার ইনফ্রারেড রশ্মি।
কোনো চেনা মহাজাগতিক বস্তুর আচার, আচরণ দিয়েই এই রহস্যময় আলোর ঝলকের ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। আকাশগঙ্গা ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলের কাছাকাছি যে জায়গা থেকে একমুখী‘পোলারাইজ্ড’সেই আলোর ঝলক বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে, গবেষক জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তার একটি নাম দিয়েছেন ‘এএসকেএপি জে১৭৩৬০৮.২-৩২১৬৩’।
এই রহস্যময় আলোর ঝলক আবিষ্কারের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল’-এ প্রকাশিত হতে চলেছে। অনলাইনে তা প্রকাশিত হয়েছে বুধবার। রহস্যের আরও কারণ, এমন আলোর ঝলকে বেশির ভাগ সময়েই আলোর বর্ণালীর অন্য অংশগুলিরও হদিশ মেলে। রেডিও তরঙ্গের সঙ্গে গামা বা এক্স রশ্মিও বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। কিন্তু এই রহস্যময় আলোর ঝলকে তা দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে শুধুই দীর্ঘতম তরঙ্গদৈর্ঘের রেডিও তরঙ্গই।
আবিষ্কারটি হয়েছে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জাইতেং ওয়াঙের নেতৃত্বে। তিনি বলেছেন, “এটা হতেই পারে সম্পূর্ণ নতুন একটি মহাজাগতিক বস্তু, যা এর আগে কোনো রেডিও টেলিস্কোপেই ধরা পড়েনি।”
গবেষকরা জানিয়েছেন, ২০১৯-এর এপ্রিল থেকে ২০২০-র অগস্টের মধ্যেই দেখা গিয়েছে এই রহস্যময় আলোর ঝলক। ১৩ বার। অস্ট্রেলিয়ায় বসানো ‘স্কোয়্যার কিলোমিটার অ্যারে পাথফাইন্ডার’ টেলিস্কোপে। অথচ ২০২০-র এপ্রিল ও অগস্টে অস্ট্রেলিয়ায় বসানো ‘মুরিইয়াং’ টেলিস্কোপে কিন্তু সেই আলোর ঝলক ধরা পড়েনি। আবার এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসানো ‘মিরকাট’ রেডিও টেলিস্কোপে ধরা পড়ে সেই রহস্য আলো। এ বছরের এপ্রিলে তা ধরা পড়ে অস্ট্রেলিয়া টেলিস্কোপ কমপ্যাক্ট অ্যারে-তেও।
এই আলোর ঝলক যে কোনো নক্ষত্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না সে ব্যাপারে নিশ্চিত গবেষকরা। কারণ, তা হলে রেডিওতরঙ্গের পাশাপাশি এক্স রশ্মি ও নিয়ার ইনফ্রারেড রশ্মিকেও বেরিয়ে আসতে দেখা যেত। এ ক্ষেত্রে তা দেখা যায়নি। নয় ‘পালসার’-ও। কারণ, সে ক্ষেত্রে আলোর ঝলক দেখা যেত সব সময়ই। নয় কোনও ‘সুপারনোভা’ (মৃত্যুর সময় নক্ষত্রের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ) বা গামা রশ্মির বিস্ফোরণ (‘গামা রে বার্স্ট’)-ও।
এগুলো কি ভিন্গ্রহীদের কোনো বার্তা? কিসের সংকেত পাঠাচ্ছে পৃথির মানুষকে? সেই রহস্যের জাল ভেদ করার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও, জানিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
বিএসডি/আইপি