বর্তমান সময় ডেস্ক,
বর্ষাকাল প্রায় শেষের দিকে, কোথায় বৃষ্টি নেই, তাই বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ে, সেটাও আবার মহাধুমধামে।
হিন্দুরীতি অনুসারে বিয়ের জন্য ছায়াধুপ, পুস্পমাল্য, গায়ে হলুদ, আর্শিবাদের ধান-দূর্বা, খাওয়ার আয়োজন সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল বিয়েতে।
শুধু তাই নয়, বিয়েতে আমন্ত্রিতরা ব্যাঙ দম্পত্তিকে দিয়েছেন নগদ অর্থসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। প্ররোহিত দিয়ে করেছেন বিয়ের সকল আনুষ্ঠিকতা।
অভিনব এই ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে রোববার দিবাগত রাত ১০ টার দিকে দিনাজপুরের সদরের রাজবাটি হীরাহার আম বাগানে মন্দিরের।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, খরা থেকে মুক্তি পেতে এবং বৃষ্টির আশায় তাদের এই আয়োজন। অনাবৃষ্টির কবলে পড়লে তারা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে থাকেন। আর এই রীতি তারা পালন করছেন শতবর্ষ আগে থেকেই।
তাদের মতে, হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সেই সময়ে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন ছিল। সেই ধারা অনুসারে ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাদের বিশ্বাস ব্যাঙের বিয়ে দিলে বৃষ্টির দেবতা খুশি হয়ে বৃষ্টি দেন।
স্থানীয় দিনাজপুর বাজবাটি হীরাহার গ্রামের নারী পুরুষের আয়োজনে বৃষ্টির আশায় দিনাজপুর সদরের রাজবাটি হীরাহার আম বাগানে মন্দিরের সামনে ব্যাঙের বিয়ে দিয়েছেন।
হীরাহার গ্রামের নারী-পুরুষ মিলে সকলেই একত্রে হয়ে দু’টি ব্যাঙকে বিয়ের জন্য গায়ে হলুদের আয়োজন করছেন। বিয়ের অনুষ্ঠানের চলছে বাজনা, আর তার সঙ্গে নৃত্য করছেন অনেকেই। বিয়ের অনুষ্ঠানে ছিল গ্রাম্য বিয়ের নাচ-গীতি। ছেলে মেয়েরা বাজনার তালে তালে নৃত্য পরিবেশন করছে।
গ্রামবাসীদের মধ্যেই ভাগাভাগি হয়ে কিছু লোক কনেপক্ষের আবার কিছু লোক বরপক্ষের। এই বিয়েতে বর ব্যাঙের নাম হৃদয় আর কনের নাম তপ্না। বর ব্যাঙের মা হয়েছিলেন শেফালী রানী আর কনে ব্যাঙের মা হয়েছিলেন ডালু বালা।
বিয়ের গীতির সঙ্গে গায়ে হলুদের কার্যক্রম শেষ হলে শুরু হয় বিয়ের কার্যক্রম। ব্যাঙ দুটিকে নতুন জামা পড়িয়ে, তেল-সিদুর মাখিয়ে গোসল করানোর পর বসানো হয় বিয়ের পিড়িতে। মালাবদলসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় পালন করা হয়। বিয়ে শেষে বরকনেকে বসানো হয় আরেকটি স্থানে। সেখানে বরপক্ষ ও কনেপক্ষ উভয়েই ধান-দূর্বা দিয়ে আর্শিবাদ করে নবদম্পত্তিকে।
এরপর গ্রামবাসী ও আমন্ত্রিত অতিথিরা অনেকেই তাদেরকে নগদ অর্থসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
এলাকার লোকজন জানান, যে বছর অনাবৃষ্টি হয়, প্রচন্ড খরার ফলে ক্ষেত ও প্রাণীকুলে হাহাকার উঠে সেই বছরই তারা এই ধরনের বিয়ের আয়োজন করে থাকেন। স্থানীয়ভাবে এটিকে ব্যাঙ্গা-ব্যাঙ্গির বিয়ে বলে থাকেন তারা। তবে কত বছর ধরে এই ধরনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা চলে আসছে সে বিষয়ে জানাতে পারেননি কেউ।
গ্রামবাসীর মতে, একশ’ বছরের আগে থেকেই ওই এলাকার মানুষ এই ধরনের বিয়ের কার্যক্রম চলে আসছে।
এলাকার ৮৩ বছর বয়সী তেনিয়া বর্মণ জানান, তিনি ছোট থেকেই এই ধরনের অনুষ্ঠানের সঙ্গে পরিচিত। যখনই খরা দেখা দিত তখনই এই ধরনের আয়োজন হতো।
তিনি আরও জানান, আগে বিভিন্ন এলাকায় এই ব্যাঙের বিয়ে দেখা গেলেও এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। আগে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি হতো। বৃষ্টির আশাতেই তাদের এই আয়োজন।
জানা যায়, সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তুলে বিয়ের আয়োজন করা হয়। উদ্দেশ্য একটাই, ভগবানকে তুষ্ট করা। যাতে তিনি খরার কবল থেকে সবাইকে রক্ষা করেন।
প্ররোহিত নিপেন চক্রবর্তী বলেন , এটা হচ্ছে হিন্দু ধর্মালম্বীরা নিজের বিশ্বাস থেকে এটা করে থাকেন। তবে দীর্ঘ দিন ধরে এই প্রচলন থাকায় বৃষ্টির আশায় এমন আয়োজন করা হয়। যেবছর বৃষ্টি বেশি হয় সেই বছর এমন আয়োজনের প্রয়োজন হয় না।
বিএসডি/আইপি