অনলাইন ডেস্ক
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতেলের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগে আমার ইনসার্ভিস ট্রেইনিং চলছিল ১৯৮৬ সনে। আমরা ৫ নং ওয়ার্ডের ডক্টরস রুমে বসতাম। রুমের কাছেই এক রুগীর সীট ছিল। সিজারিয়ান সেকশন অপারেশন হয়ে এক শিশু জন্মেছিল প্রফেসর ডাঃ জোবায়েদ স্যারের অধীন।
ক্লিনিক্যাল এসিস্টেন্ট (সি এ) ছিলেন খুব সম্ভব ডা. আনন্দ দা। এখন সি এ কে এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার বলা হয়। আমি সি এ-র সাথে রাউন্ড দিতাম। নবজাতকের বড় বোনটির বয়স প্রায় ৫ বৎসর ছিল। সারাক্ষণ কটকট করে কথা বলত। একবার মেয়েটি তার কাছে আসা তারই বয়সের আরেক মেয়ের কাছে বলছিল, ‘একটা বাচ্চা মানুষ করা চাট্টিখানি কথা না। ’
তার এমন পাকা কথা শুনে আমরা আশ্চর্য হলাম। হয়ত সে বড়দের আলাপ শুনেছিল। বড়রা হয়ত এমন কথা বলেছিল। সেটাই নকল করেছিল।
আমরা অনেক সময় শিশুদের মাথায় ধর্মীয় ধারণা দিতে চেষ্টা করি। বলে থাকি ‘আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি থেকে ’। শিশুরা ধারণা করে নেয় মাটি ডলে যেমন মাটির পুতুল বানানো যায়, হয়ত আল্লাহ তেমন করে মানুষ বানিয়েছিলেন।
ডা. আনন্দ দা শিশুটিকে আদর করতেন। তাকে মাঝে মাঝে বিরক্ত করতেন। শিশুটি নবজাতককে পুতুলের মত করে আগলিয়ে রাখতো। আনন্দ দা শিশুটিকে ক্ষেপানোর জন্য বললেন
– এই, সরে যাও। ছোট্ট বাবুটি আমাদের। আমরা একে নিয়ে নিব।
– এ, বাবু আমাদের।
– বাবু আমাদের। আমরাই পেট কেটে বাবু বের করে এনেছি। এখন বাবু আমাদের।
– বাবু বানিয়েছে কে?
– আমরাই বাবু বানিয়েছি।
– এ, বানিয়েছে। মাটি ডলেছে কে?
– কে ডলেছে?
– মাটি ডলেছে আব্বু ও আম্মু।
– হ্যা, হ্যা, হ্যা, হো, হো, হি হি হি।
ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার
সাবেক প্রধান,
প্যাথলজি বিভাগ,
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ
এবং
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ