নিজস্ব প্রতিবেদক:
সবাই স্বপ্ন দেখে একটি ভালো চাকরির। কিন্তু তিনি চাকরি করার স্বপ্ন দেখেননি। তিনি অধ্যারত অবস্থা থেকেই চাকরি করার পক্ষে ছিলেন না। ফড়িংয়ের মতো ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছার পাশাপাশি তারও জোর ইচ্ছা স্বাধীনভাবে কিছু করার। এ ইচ্ছে অদম্য হয়ে ওঠে ধীরে ধরে।
ছবি আঁকতে পারতেন। ছবি আঁকার হাতে-খড়ি হয় তার দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনার করার সময় থেকেই। এক পর্যায়ে পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে স্কুল ও একাডেমিতে শিশুদের চিত্রাঙ্কন শেখাতেন। এক সময় যেন নিজের অজান্তেই শুরু করে দিলেন বন্ধুদের জামা, টি-শার্টে নানান নকশা আঁকার কাজটি। সেটা নেশায় রূপ নেয়।
বাবা মায়ের ইচ্ছা অনুসারে, অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন। তবে চাকরির জন্য কোথাও চেষ্টা করেননি। তিনি নুরুন্নাহার নীলা। মনে ভেতরের স্বাধীনচেতা ইচ্ছা থেকে একদিন পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করে দিলেন।
নুরুন্নাহার নীলার কাছ থেকে জানা গেল, তিনি খুবই অল্প টাকায় টাঙ্গাইলে গিয়ে কিনে আনলেন ১৪টি শাড়ি। বাসায় এসে মোবাইল ফোনে কিছু ছবি তুলে একটা পেজ সাজালেন। অনলাইনে ১৪টি শাড়ি নিয়েই সাত বছর আগে শুরু হয়েছিল ‘সাতকাহন’ নামে প্রতিষ্ঠান।
সাতকাহন এখন পাখা মেলেছে। বড় হয়েছে। ক্রেতা বেড়েছে। আর অনাবিল আনন্দও বেড়েছে নীলার। নীলা বলেন, চাকরি না করে উদ্যোগ নিয়েছি। তার জন্য আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। আমার বন্ধুদের অনেকে ঠিকই চাকরি করছে। কিন্তু আমি অনলাইনে শাড়ির ব্যবসা করছি। শুভাকাঙ্ক্ষীদের উৎসাহ-সহযোগিতার জন্যই শত প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও কখনো পিছিয়ে পড়িনি।
নিখুঁত, নিপুন সুন্দর কাজ করার চেষ্টা করে চলেছেন নীলা। ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা ছিল শুরু থেকেই। প্রথমে ক্রেতাদের কাছে শাড়ি পাঠাতেন নগদ অর্থ না পেয়েই। শাড়ি দেখে ভীষণ খুশি হতেন ক্রেতারা। ক্রেতারা ঠিকই অর্থ পাঠিয়ে দিতেন। এখন সাতকাহনে অর্ডার বেড়েছে। এক সময় একজন কর্মচারী ছিল। যাত্রা শুরুর বছরখানেক পর রাজধানীর উত্তরায় নিজের আলাদা অফিস দিলেন, হলো শো-রুম। পরে বসুন্ধরা সিটিতে সাতকাহনের দ্বিতীয় শো-রুমটি চালু করেন।
শাড়ির পাশাপাশি নিজের ডিজাইন করা পাঞ্জাবি, ব্লাউজ, কুর্তি, গহনা, টিপ, সালোয়ার-কামিজ নিয়েও কাজ শুরু হলো। শাড়ির সব ডিজাইন নীলা নিজে করে থাকেন। প্রতিটি বাঙালি উৎসব এলে কাজ আরও বেড়ে যায়। নীলার ডিজাইন করা পোশাকে দেশীয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া থাকে।
আছে তার তাঁত বোনার তাঁতি। তারা শাড়ি বুনে যান। কারখানায় চলে রঙ্গিন ডিজাইনের কাজ। অনলাইন ছাড়াও শো রুমে ক্রেতারা সাতকাহনের পণ্য কিনতে পারছেন। উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরের ৫৬ গরীব-এ-নেওয়াজ এভিনিউয়ের বাসায়ও শো রুম আছে সাতকাহনের।
বিএসডি/ এলএল