নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে রাস্তাঘাট বন্ধ করা সংক্রান্ত কোনো আলোচনা হয়নি বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে মার্কিন দূতাবাস৷ তবে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতির জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাল্টা বিবৃতিতে দেওয়া হয়েছে৷ এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে আগামী ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ, চলমান দুর্গাপূজা, মায়ানমার হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে কথা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের৷
সোমবার (২৩ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়৷ এটা সই করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোঃ শরীফ মাহমুদ অপু৷
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গতকাল ২২ অক্টোবর বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। অত্যন্ত সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত সৌজন্য সাক্ষাতে আসন্ন নির্বাচন, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ, চলমান দুর্গাপূজা, মায়ানমার হতে জোরপূর্বক বিতারিত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বিষয় এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ঐ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, আলোচনায় মান্যবর রাষ্ট্রদূত উল্লেখিত বিষয়সমূহ নিয়ে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা ও মতামত জানতে চেয়েছেন। সৌজন্য সাক্ষাতের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিডিয়া ব্রিফিং করেন। মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের প্রেক্ষাপটে পূর্বাপর আলোচনার মর্মার্থ এবং তথ্যের ভিত্তিতে মাননীয় মন্ত্রী আলোচনা বহির্ভুতও বিভিন্ন প্রশ্র উত্তর দেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠকে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকায় রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। রোববার (২২ অক্টোবর) রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দূতাবাসের মুখপাত্র এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ও হস্তক্ষেপমুক্ত রাজনৈতিক অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন রাষ্ট্রদূত।
এরআগে পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর বিকালে সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সরকার ঢাকায় প্রবেশের সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেবে কি না জানতে চেয়েছেন তিনি। বৈঠকে তিনি জানতে চেয়েছেন বিএনপি যে একটি বিরাট কর্মসূচি দিয়েছে সেখানে অনেক লোক নিয়ে আসবে, আপনারা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেবেন কি না, কিংবা আপনারা অন্য কিছু করবেন কিনা।
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি ওই ধরনের কোনো প্রোগ্রাম আমাদের নেই। আমরা মনে করি, তারা যে রাজনৈতিক এজেন্ডা দিয়েছেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে করবেন। কর্মসূচি যদি তারা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করেন, তবে আমাদের কিছু বলার নেই।’
‘তারপরও আমরা অনুরোধ করবো ঢাকা শহর এমনিতেই একটি যানজটপূর্ণ শহর। এখানে দুই কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে, এমনি কি ঢাকার রাস্তাঘাট মানুষে পূর্ণ থাকে। সেখানে যদি ১০ লক্ষ মানুষ বা এর চেয়ে বেশি লোক ঢোকে তারা যেটা বলেছেন, তাহলে তো একটা মিসম্যাচ হয়ে যাবে, কমিউনিকেশন, এটা সেটা। সেগুলো যাতে তারা না করেন, সেটার জন্য আমরা রিকোয়েস্ট করব।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তিনি (রাষ্ট্রদূত) জানতে চেয়েছিলেন যে আসা-যাওয়া তোমরা বন্ধ করবেন কিনা। আমি বলেছি আসা-যাওয়া বন্ধ আমরা কেন করব? ঢাকা আশা তো সবারই প্রয়োজন, একটা রোগীর ঢাকা আসা প্রয়োজন, বিদেশে যেতে হলে ঢাকায় আসা প্রয়োজন- সবকিছু তো ঢাকা কেন্দ্রিক। কাজেই আসা-যাওয়া বন্ধ করার কোন প্রশ্নই আসে না। তারা (বিএনপির নেতাকর্মী) আসবে তারা যাবে, সেখানে আমরা কোন বাধা দিব না কিংবা আমরা সেটার কোন চিন্তাও করছি না।’
‘আমরা শুধু এটুকুই বলব, তারা যাতে কোন ভায়োলেন্স লিপ্ত না হয়, চলাচলের জায়গাটি তারা যাতে সচল রাখে। এটুকুই আমাদের রিকোয়েস্ট, সেটা আমরা তাকে জানিয়েও দিয়েছি।’
একটি দেশের রাষ্ট্রদূত একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে এসেছেন। এটি কূটনীতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রশ্নটি তো আমি আপনার কাছে করতে চাই। আমার কথা হল, তিনি আসছেন তিনি একটি দেশের রাষ্ট্রদূত তিনি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন, আমরা উত্তর দিয়েছি। এটা করতে পারে কি পারে না- সেটা দেখা আমার বিষয় নয়। সেটার জন্য আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহোদয় আছেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আছে।’
‘আপনার (সাংবাদিক) কাছে আমারও প্রশ্ন। এ সমস্ত ব্যাপারে বোধ হয় কিছুটা সংযমী হওয়া উচিত।’
রাজনৈতিক শিষ্টাচার এর মধ্যে পড়ে কিনা- সেই বিষয়ে আপনি আমাদের কাছে প্রশ্ন রাখলেন। কিন্তু আপনার কাছে জানতে চাইলেও আপনি তো তথ্য দিয়ে দিলেন। তথ্য দেওয়াটা বাধ্যতামূলক ছিল কিনা- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তথ্য যতটুকু দেওয়ার আমরা ততটুকুই দিয়েছি। একটা রাষ্ট্রদূত আমাদের সঙ্গে সৌজনের সাক্ষাতে এসেছে, জিজ্ঞাসা আমাকে করতেই পারে। কি ব্যবস্থা নিয়েছো, কোন ভায়োলেন্স হবে কিনা? সেই জায়গায় আমরা সেইটুকুই মেনটেইন করেছি। যতখানি প্রয়োজন ততটুকুই আমরা (তথ্য) দিয়েছি।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দূর্গাপূজা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি জানতে চেয়েছেন- পূজা শান্তিপূর্ণভাবে হবে কিনা, সবকিছু আমরা দেখাশোনা করছে কিনা। আমরা তাদের জানিয়েছি প্রতিবছরই বাংলাদেশের পূজা মন্ডপের সংখ্যা বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের পূজা মন্ডপের সংখ্যার সঙ্গে যদি তুলনা করা হয়, তবে দেখা যাবে আমাদের দেশে পূজা মন্ডপের সংখ্যা বেশি। তাদের জানিয়েছে প্রতিটি পূজা মন্ডপে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ ভায়োলেন্স পছন্দ করে না। আমাদের দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়, এই পূজোতে কিছু হবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তারপরও যথেষ্ট সতর্ক অবস্থায় সবাই আছে।’পুজ উদযাপনের বিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সন্তুষ্টি প্রকাশ করে গেছেন বলেও জানান মন্ত্রী।
এমএম