খেলাধূলা প্রতিনিধি:
লাঞ্চের তখন মাত্র এক ওভার বাকি। পোর্ট এলিজাবেথে ফলোঅন এড়ানোর আশায় প্রহর গুনছিল বাংলাদেশ দল। গতকাল ম্যাচের তৃতীয় দিনে সিমন হার্মারের করা ওভারের প্রথম বলে চার মেরে টেস্ট ক্যারিয়ারের ২৫তম হাফ সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় বলে এলবির হাত থেকে বেঁচে গেছেন।
ধারাভাষ্যকাররা প্রশংসা করে বলছিলেন, মুশফিক খুব পেশাদার ক্রিকেটার। পরের বলেই ধারাভাষ্যকারদের মুখে চুনকালি পড়ল। কারণ সবাইকে হতবাক করে দিয়ে মুশফিক শিশুতোষ কাণ্ডের প্রদর্শনী করলেন। তৃতীয় বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোল্ড হলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। ম্যাচের কন্ডিশন বিবেচনায় রীতিমতো অমার্জনীয় অপরাধই করে বসলেন তিনি।
ক্যারিয়ারের ৮০তম টেস্ট খেলতে নামা একজন ব্যাটসম্যানের কাছে এমন সময়ে এই শট অপ্রত্যাশিত। আবারও রিভার্স সুইপ তার হন্তারক। গত বছর টি-২০ বিশ্বকাপেও এই শট বারবার খেলে সমালোচিত হয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু আত্মাহুতির একই প্রক্রিয়ায় বারবার ডুব দিচ্ছেন তিনি।
সিনিয়র ব্যাটসম্যানের এমন বালকসুলভ কর্মকাণ্ডে বিস্মিত সবাই। জাতীয় দলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গতকাল বললেন, ‘এটার কোনো ব্যাখ্যা নাই ভাই। ও এমন সময়ে এই শট কেন খেলছে, এটা ও ভালো বলতে পারবে। খুবই দৃষ্টিকটু, অপ্রত্যাশিত। ৮০ টেস্ট খেলা একটা ব্যাটসম্যান লাঞ্চের আগের ওভারে তার উইকেটের মূল্য না বুঝলে আমরা কী করব? ওখানে তো কোনো তাড়া ছিল না।’
গতকাল মুশফিককে হারিয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল বাংলাদেশ দল। লাঞ্চের পর মাত্র ৭ রান যোগ করেই প্রথম ইনিংসে ২১৭ রানে অলআউট সফরকারীরা। প্রথম ইনিংসে ২৩৬ রানের লিড পেয়েছিল স্বাগতিকরা। ফলোঅন এড়াতে ৩৬ রান দরকার ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু মুমিনুলদের ফলোঅন না করিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সকালে দিনের প্রথম তিন বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ভালো শুরু করেছিলেন ইয়াসির আলী। মুশফিকের সঙ্গে তার ৭০ রানের জুটিতে ছুটছিল বাংলাদেশ। ৪৬ রান করে ইয়াসির কট অ্যান্ড বোল্ড হন মহারাজের বলে। মুশফিককে নিয়ে লোয়ার অর্ডারে প্রতিরোধের আশা ছিল। কিন্তু সেটির অপমৃতু্য হয় রিভার্স সুইপে। মুশফিক ৫১ রান করেন। পরে মিরাজ ১১, তাইজুল ৫ রান করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার মুলডার, হার্মার ৩টি করে এবং মহারাজ-অলিভিয়ের ২টি করে উইকেট পান।
প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর না করলে ম্যাচ ধরার উপায় নেই। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু গতকাল বলেন, ‘প্রথম ইনিংসে ভালো না করলে ম্যাচে থাকা কঠিন। ব্যাটিংয়ে আপনাকে ভালো করতেই হবে। আমরা প্রথম ইনিংসে ভালো করতে পারছি না। এটাই ব্যবধান গড়ে দিচ্ছে। কারণ বোলিংটা ভালোই হচ্ছে।’
দেশের মাটিতে কার্যত উঠতে-বসতে স্পিন খেলেন মুমিনুলরা। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় চিরচেনা স্পিনেই কুপোকাত টাইগাররা। দুই দেশের স্পিন বোলিংয়ের ব্যবধান জানতে চাইলে গতকাল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু বলেছেন, ‘ওদের স্পিনাররা ট্রু উইকেটে খেলে অভ্যস্ত। ওখানে বোলিং করে সবসময়। জানে কীভাবে উইকেট কাজে লাগাতে হয়। ওদের পেস ভ্যারিয়েশন দেখেন। খুব টার্ন না থাকলেও ওরা দারুণ স্পটে বোলিং করছে।’
বিএসডি/ এমআর