আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের এক স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার তিন দিন পর একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। সেই নোটে আত্মহত্যার আগে ওই কিশোরী লিখে গেছে মর্মপীড়াদায়ক এক বার্তা। যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হওয়ার কথা জানিয়ে ওই কিশোরী লিখেছে, ‘একজন মেয়ে শুধুমাত্র মাতৃগর্ভ অথবা কবরেই নিরাপদ। এমনকি স্কুল শিক্ষকদেরও বিশ্বাস করা যায় না।’
গত শনিবার বাজার থেকে বাড়িতে ফিরে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান কিশোরীর মা। কিশোরীর লিখে যাওয়া সুইসাইড নোটে ‘যন্ত্রণা এবং হতাশা’র চিত্র ফুটে উঠেছে। যা হয়তো তার পরিবারেরও জানা ছিল না।
ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধারের পর যৌন নিপীড়নকারী এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই যুবক তরুণীকে যৌন নিপীড়ন চালানোর অভিযোগ স্বীকার করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
চেন্নাই পুলিশের একজন কর্মকর্তা এনডিটিভিকে বলেছেন, ওই কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিল বলে স্বীকার করেছে গ্রেফতারকৃত যুবক। গত দুই সপ্তাহ ধরে ওই যুবক কিশোরীকে নির্যাতন এবং হয়রানি করে আসছিল। আমরা নোংরা মেসেজ এবং পর্ন ছবির আদান-প্রদানের প্রমাণ পেয়েছি। এসব কিছুর আগে তাদের মধ্যে ৮ মাসের ভালো বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
গত শনিবার ওই কিশোরীর মা মাত্র এক ঘণ্টার জন্য বাড়ির বাইরে ছিলেন। বাসায় ফিরে মেয়েকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি। তবে তার কক্ষ ভেতর থেকে আটকানো ছিল। পরে দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে তাকে ঝুলন্ত দেখা যায়।
কক্ষে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। এতে ওই কিশোরী লিখেছে, ‘স্কুলও নিরাপদ নয় এবং শিক্ষকদেরও বিশ্বাস করা যায় না। মানসিক নির্যাতনের কারণে সে পড়াশোনা এমনকি ঘুমাতেও পারতো না।’
ছোট এই স্কুলশিক্ষার্থী লিখেছে, ‘ছেলেরা যেন মেয়েদের শ্রদ্ধা করে সেটি প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত সন্তানদের শেখানো।’
পুলিশ বলছে, তিন বছর আগে ওই কিশোরী যখন ৮ম শ্রেণিতে পড়তো, তখন একই স্কুলে একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল অভিযুক্ত যুবক। পরবর্তীতে মেয়েদের স্কুলে ভর্তি হয় ওই কিশোরী। কিন্তু ইনস্টাগ্রামে তারা দু’জনই বন্ধু হয়েছিল।
ওই কিশোরী আরও অন্যান্য লোকজনের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছিল কি-না তা সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
সুইসাইড নোটে ওই কিশোরী ‘যৌন হয়রানি বন্ধ করুন’ লিখে তার আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিতে যাদের ভূমিকা আছে তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়ে গেছে। নোটে ‘আমার জন্য ন্যায়বিচার’ চাই লিখে সম্ভাব্য তিন নিপীড়ক—‘আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক এবং প্রত্যেকে’ উল্লেখ করেছে ওই কিশোরী।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন এক ভিডিও বার্তায় ওই কিশোরীর প্রাণহানির ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে রাজ্যের নাগরিকদের চরম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সাহসিকতার সঙ্গে যৌন নিপীড়কদের পরিচয় প্রকাশ এবং তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্টালিন।
সূত্র: এনডিটিভি।
বিএসডি/ এলএল