আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অস্ট্রেলিয়ার কাছে সাবমেরিন বিক্রি নিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে জটিলতা দেখা দিয়েছিল, তা অবসানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
টেলিফোনে প্রায় ৩০ মিনিট কথা হয় দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে। ফোনালাপে সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র দেশসমূহের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন জো বাইডেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির পর ওয়াশিংটনে তাদের রাষ্ট্রদূত ফেরাতে রাজি হয়েছে ফ্রান্স। আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে ইউরোপে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের ব্যাপারেও সম্মত হয়েছেন বাইডেন এবং ম্যাক্রোঁ।
দুই নেতার ফোনালাপের পর একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর হোয়াইট হাউস এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে।
সেখানে বলা হয়েছে, ‘দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্বাভাবিক করার ব্যাপারে উভয় দেশের নেতা সম্মত হয়েছেন। ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় মিত্রদের কৌশলগত স্বার্থকে যুক্তরাষ্ট্র সবসময়েই গুরুত্ব দেয় এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
সাহেল অঞ্চলে ইউরোপের দেশগুলো সন্ত্রাসবাদবিরোধী যেসব অভিযান চালাচ্ছে সেখানে সহায়তা বাড়াতে ওয়াশিংটন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাহেলে সমরাস্ত্র ও রসদ সহযোগিতার বিষয়ে কথা হয়েছে দুই নেতার মধ্যে। সেনা সহায়তার ব্যাপারে কোনো কথা হয়নি।
বুধবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র জেন সাকি সাংবাদিকদের বলেছেন, ফোনে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টে আলোচনা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ। আগামী অক্টোবরে তারা পরস্পরের সঙ্গে সাক্ষৎ করবেন এবং দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে তারা উভয়েই সম্মত হয়েছেন।’
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সপ্তাহখানেক আগে অকাস নামে একটি জোট গঠনের ঘোষণা দেয়।
এই জোটের আওতায় অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তিচালিত নিউক্লিয়ার সাবমেরিন তৈরিতে প্রযুক্তি সরবরাহে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে বিশ্বের মাত্র ৭ টি দেশে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন আছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই চুক্তি হওয়ার পর ফ্রান্সের কাছ থেকে ১২ টি সাধারণ সাবমেরিন নিতে ৪ হাজার কোটি ডলারের যে চুক্তি ছিল, তা বাতিল করে দেয় অস্ট্রেলিয়া। দু-দেশের মধ্যে এই চুক্তিটি হয়েছিল ৫ বছর আগে।
এ ঘটনায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ফ্রান্স। অকাসে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো ফ্রান্সের ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’ বলে মন্তব্য করেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ ইউভ লে দ্রিয়ান।
প্যারিস পরে ওয়াশিংটন ও ক্যানবেরা থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদেরও ডেকে পাঠায় এবং যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি প্রতিরক্ষা বৈঠকও বাতিল করে দেয়।
তবে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে বাইডেনের ফোনের পর ফ্রান্স যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রাষ্ট্রদূত ফেরত পাঠাতে রাজি হলেও অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্টদূত ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে এখনও কিছু বলেনি দেশটি।
সূত্র : রয়টার্স