দেশের নন্দিত রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী মিতা হক আর নেই। রোববার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
মিতা হকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার মেয়ে ফারহিন খান জয়িতার বন্ধু ব্যারিস্টার আজমাইন।
তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত হলেও সুস্থ হয়েছিলেন মিতা হক। করোনা নেগেটিভ আসার পর ৯ এপ্রিল তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ১০ এপ্রিল (শনিবার) সকালের দিকে হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। এরপর আবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এর আগে গত ২৫ মার্চ মিতা হকের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। শুরুতে বাসাতে আইসোলেশনে থাকলেও ৩১ মার্চ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মিতা হক গত ৫ বছর ধরে কিডনি রোগেও ভুগছিলেন। নিয়মিত ডায়লাইসিস নিয়ে ভালো ছিলেন। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানসিক এবং শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন। করোনা থেকে সেরে উঠলেও হার্ট অ্যাটাকের কাছ হার মানতে হয় তাকে।
মিতা হকের জন্ম ১৯৬২ সালে। তিনি প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা খালেদ খানের স্ত্রী। তার চাচা দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্রপথিক ও রবীন্দ্র গবেষক ওয়াহিদুল হক। মেয়ে জয়িতাও রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী।
১৯৯০ সালে বিউটি কর্নার থেকে প্রকাশিত হয় মিতা হকের প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবাম ‘আমার মন মানে না’। সংগীতায়োজনে ছিলেন সুজেয় শ্যাম। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টি রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। তার প্রায় বিশটি অ্যালবামের বেশির ভাগই প্রকাশিত হয়েছে কলকাতা থেকে। ‘সুরতীর্থ’ নামে একটি গানের স্কুলও রয়েছে তার।
মিতা হকের বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন। তার মোট ২৪টি একক অ্যালবাম রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ভারত থেকে ও ১০টি বাংলাদেশ থেকে।
সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার মিতা হককে একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও শিল্পকলা পদক, বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার, চ্যানেল আই রবীন্দ্র মেলা পুরস্কার এবং ভারত থেকে অনেক সম্মানজনক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তবে মানুষের ভালোবাসাকে জীবনের সবচেয়ে বড় পুরস্কার বলে অবহিত করতেন এই কণ্ঠশিল্পী।