নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলা একাডেমির সভাপতি ও অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেছেন, রাজনীতি এখন রাজনীতিবিদদের হাতের বাইরে চলে গেছে। এটাই এখন দেশের মৌলিক সমস্যা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে রাষ্ট্র ভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আয়োজিত ‘২৪ গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র ও জাতীয় ঐক্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, ছোটখাটো চুরি-ডাকাতির ঘটনার বিচার হচ্ছে বটে। কিন্তু রাজনৈতিক মামলাগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির আদেশ মেনে রায় দিচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্ট। শেখ হাসিনার শাসনামলের মতো যদি এখনো এ অবস্থা থেকে যায়, তবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে দুঃসাধ্য ব্যাপার।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অস্তিত্ব বিপন্ন করে দিচ্ছে। তারা চায় না বাংলাদেশ একটি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠুক। ভারত বিরোধিতা ও যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক রাজনীতিও ঠিক হবে না।
অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, একদল বুদ্ধিজীবী আছেন যারা যুক্তরাষ্ট্রের অন্ধ সমর্থক, সেই তারাই এখন প্রবলভাবে ভারতের বিরোধিতা করছেন। আমাদের বাস্তবতার মধ্যে থাকতে হবে। ভারত চারদিক থেকে আমাদের ঘিরে আছে। উগ্র ভারত বিরোধিতা রাষ্ট্রীয় জীবনের ক্ষতি হবে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রধান পরাশক্তি৷ যুদ্ধবাজ এই দেশটি এখন কোনো দেশ দখল করবে না। তারা চাইবে দুর্বল দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের দেশে এসে বলে এটা করতে হবে, ওটা করতে হবে। এসব কথা কি তারা ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামে গিয়ে বলতে পারবে? সেই বিবেচনায় বলছি, যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ হয়ে ভারতের সঙ্গে বিরোধিতা কখনও সফল হবে না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের জন্য আমরা ভারতের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে তাই বলে, আমরা সবসময় ভারতের অনুগত থাকব না। স্বাধীন সত্তা নিয়ে আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখব।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসন ও শিক্ষা কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন। বাহাত্তরের সংবিধান সম্পূর্ণ বাতিল নাকি কিছু ধারা সংশোধন করা হবে এ নিয়ে অযথা বিতর্ক তৈরি না করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে তা সংশোধন করা জরুরি। অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডে অনেকে ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। তবে আমরা তাদের সাফল্য দেখতে চাই। তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়ে যাবে, এমনটি প্রত্যাশা করি। উপদেষ্টাদের তাই আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে পরামর্শ দিতে হবে।
আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও রাষ্ট্র ভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়ক গোলাম সরোয়ার মিলন, রাষ্ট্র ভাবনা ও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের আহ্বায়ক মো. আসাদুজ্জামান, সাবেক সচিব আবু আলম শহিদ খান, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ প্রমুখ।