নিজস্ব প্রতিবেদক,
ফরিদপুরে আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে এ বছর আমন রোপণে বেশি ঝুঁকেছেন চাষিরা। তবে চারার দাম গত বছরের তুলনায় বেশি হওয়ায় এবং শ্রমিক সংকটের কারণে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন তারা।
সালথা উপজেলার রামকান্তপুর ওবিভাগদি এলাকার কৃষক কাদের আলী, শরিফুল, মোরাদ হোসেনসহ আরও অনেক বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সব মিলিয়ে রোপা আমনের আবাদ খুব ভালো হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিভিন্ন হাট-বাজার থেকে রোপা আমনের চারা কিনছেন কৃষকরা। তবে গত বছরের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক চারা না কিনেই ফিরে যাচ্ছেন। আবার জমি উপযোগী থাকায় অনেকে বেশি দামেই চারা কিনছেন। মধুখালী উপজেলার সবচেয়ে বড় দুটি হাট পৌর সদর ও কামারখালী। সেখানে এক আঁটি চারা বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০টাকায়। গত বছর এর দাম ছিলো ২৫০-৩০০ টাকা।
মধুখালী পৌরসভার গোন্দারদিয়া গ্রামের চাষি করিম শেখ বলেন, ‘এ বছর চারার দাম দ্বিগুণ। আবার অনেকের পাট কাটা বাকি আছে বা জমিও তৈরি করতে পারেন নাই। তারা চারা কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’
একই গ্রামের কাদের মুন্সী বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি হওয়ায় এ বছর আমন ধান রোপণ করছেন বেশিরভাগ চাষি। জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানসহ অন্য ধানও রোপণ করা হচ্ছে।
কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুরো ভাদ্র মাস রোপা আমন ধানের চারা রোপণ করবেন তারা। নতুন জাতের হাইব্রিড ধানের চারা হওয়ায় দাম একটু বেশি হলেও ফলন হবে প্রচুর।
এদিকে, চারার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি চলছে শ্রমিকের সংকট। মজুরি অনেক বেশি দিয়ে শ্রমিক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা দিতে হয়। তারপর আবার শ্রমিক পেতে দিনের পর দিন অপেক্ষাও করতে হয়। জমি প্রস্তুত করার পরও অনেক চাষিদের পড়তে হচ্ছে শ্রমিক সংকটে।
উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ব্যাসদী গ্রামের ধান চাষী জুয়েল শেখ বলেন, ‘লিজ ও বরগা নিয়ে এক একর জমিতে আধুনিক জাতের ধানের চারা রোপণ করেছি। হাইব্রিড জাতের ধান হওয়ায় ফলন অনেক বেশি হবে। তবে শ্রমিকের সংকট থাকায় নিজেই রোপণ করছি।’
মধুখালী উপজেলার বাগাট গ্রামের কৃষক বাবলু শেখ জানান, অন্যান্য বছর উত্তরবঙ্গের কৃষি শ্রমিকরা এ এলাকায় আসতেন। যে কারণে সহজেই শ্রমিক পাওয়া যেতো। কিন্তু এ বছর করোনা আর লকডাউনের কারণে শ্রমিকরা আসতে পারেননি তাই শ্রমিক সংকট তো আছেই সঙ্গে দিতে হচ্ছে চড়া মজুরি।
মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলভী রহমান জানান, রোপা আমন সাধারণত ভাদ্র মাস পর্যন্ত রোপণ করা হয়। উপজেলার ৬ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে এরই মধ্যে চারা রোপণ করেছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. হযরত আলী জানান, এ বছর জেলার নয়টি উপজেলায় ৬৪ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষাবাদ হচ্ছে। এরই মধ্যে ৮০ ভাগ জমিতে ধান রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু জায়গায় বন্যার পানি ঢুকলেও খুব একটা সমস্যা নেই। বর্তমান যে পরিস্থিতি আছে তা থাকলে অন্যান্য বছরের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
বিএসডি/আইপি