বিনোদন ডেস্ক-
কথায় বলে, ‘অর্থই অনর্থের মূল’। অর্থ বা সম্পদ জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য অপরিহার্য হলেও যথাস্থানে এর ব্যবহার না হলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে নেমে আসে অকল্যাণ আর অশান্তি। এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন বেশ কিছু ধনীর দুলাল। সম্প্রতি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে নায়িকা পরীমণি ও কথিত মডেল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসা এবং মডেল মৌসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের পর ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছে ধনীর অসাধু দুলালরা।
গুলশান ও বনানী এলাকায় শিশাবার ও লাউঞ্জে ধনী ও প্রভাবশালীদের পরিবারের যেসব সন্তানদের আনাগোনা ছিলো তাদের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ তাদের ফেসবুক আইডি ডিজেবল করে অজ্ঞাত স্থানে ঘাপটি মেরে রয়েছেন। আবার পরী, পিয়াসা কিংবা এমন শ্রেণীভুক্ত মডেল কিংবা উশৃঙ্খল তরুণীদের সঙ্গে বিভিন্ন পার্টিতে যেসব ধনীর দুলালরা ছবি তুলে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন সেগুলোও তারা ডিলিট করে দিচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পরী-পিয়াসাদের খদ্দের কেবল রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক নয়, দেশের বিভিন্ন শহরের শীর্ষ পর্যায়ের ধনীর দুলালরাও রয়েছেন। আর এই নায়িকা এবং কথিত মডেলদের অসামাজিক-অস্বাভাবিককাণ্ড তাদের পরিবারের সদস্যরা জেনেও মুখ বন্ধ করে ছিলেন। বিপথগামী সদস্যদের মাধ্যমে বিলাসবহুল জীবনযাপনের সুযোগ পাচ্ছিলেন পরিবারের সদস্যরা। অবৈধ সম্পর্কের বিনিময়ে ধনীর দুলাল, অসাধু ব্যবসায়ী কিংবা প্রভাবশালী কারও কারও কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া বিএমডব্লিউ গাড়ি এবং রাজকীয় বাড়িতে ছিলো তাদের বসবাস। পরী-পিয়াসারা পর্ণগ্রাফির সঙ্গেও জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন- পরীমনির ‘গডফাদার’ ছিলেন নজরুল রাজ!
পরী-পিয়াসাদের ধরার পাশাপাশি তাদের কাছে যে ধনীর দুলালরা যেতো তাদের বিষয়ে কী চিন্তাভাবনা করছে আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে সবাই।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের এক সদস্য বলেন, কোন অভিযোগ পেলে বা উর্ধ্বতন পর্যায় থেকে নির্দেশনা আসলে আমরা সেই বিষয় নিয়ে কাজ করি। তবে অসাধু ধনীর দুলাল বা প্রভাবশালীদের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। প্রয়োজন হলে সেগুলো কাজে লাগানো হবে।
জানা গেছে, কেবল রাজধানী ঢাকাতেই অসামাজিক ও অপকর্মে লিপ্ত ৩০০ শতাধিক ধনীর দুলালের তথ্য আইন প্রয়োগকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে।
এদিকে র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস্). কর্ণেল কে এম আজাদ আরটিভি নিউজকে বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছে অসামাজিক ও বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত কথিত মডেল, নায়িকা ও সুন্দরী তরুণীদের বিষয়ে অভিযোগ আসে। তাছাড়া আমাদের সাইবার মনিটরিং টিমের নজরদারিতেও তাদের অস্বাভাবিক রকমের আচরণ ধরা পড়ে। ওইসব মডেল, নায়িকা বা সুন্দরী তরুণীদের কাছে যেসব ধনীর দুলালদের নিয়মিত যাতায়াত ছিলো তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া পিয়াসা ও পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদে এমনসব ধনীর দুলালদের নাম-পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরকেও অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার জন্য তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তবে পরী-পিয়াসারা গ্রেপ্তারের পর ওই ধনীর দুলালরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদেরকে ট্রেস করা কঠিন হয়েছে যাচ্ছে। তারা অল্প সময়ের মধ্যেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে অবস্থান পরিবর্তন করছে।
এদিকে অভিযান সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে ধনীর দুলালদের কয়েকজনকে নজরদারীর মধ্যে রাখা হচ্ছে, যারা কেবল ক্লায়েন্ট নয়, ওইসব অপকর্মের ইন্ধন যুগিয়েছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার। প্রয়োজনে তাদের তালিকা শীর্ষ পর্যায়ে পাঠিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া বিষয়ে নির্দেশনা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গুলশান-বনানী-উত্তরায় বারকেন্দ্রীক অপকর্মে একাধিক গ্রুপ অব কোম্পানির কর্ণধার, অভিজাত এলাকায় ক্লাব পরিচালনায় দায়িত্বরত ব্যক্তি, শীর্ষ পর্যায়ের গাড়ি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী এবং কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। যারা ওইসব মডেল, নায়িকা বা সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গ নিতো এবং খুশি হয়ে বিনিময়ে বস্তুগত এবং অবস্তুগত উপহার প্রদান করতো। তবে ওইসব সেনসেশনাল তরুণীরা তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে তাদের সঙ্গ নেওয়া ধনীর দুলালদের গোপন ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ব্লাকমেইল করে মোটা দাগের অর্থ হাতিয়ে নিতো। অন্যথায় ওইসব ছবি বা ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে হেনস্তা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হতো।
বিএসডি/এমএম