আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের হামলা সম্পর্কে লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জর্জ কোরদাহির এক মন্তব্যের জের ধরে রিয়াদে নিযুক্ত লেবাননের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে সৌদি সরকার। রিয়াদ বলছে, লেবাননের তথ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল অত্যন্ত ‘আক্রমণাত্মক’।
এছাড়া একই কারণে লেবাননের রাষ্ট্রদূতকে দেশ ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে বাহরাইনও। দেশ ত্যাগ করতে দুই দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। শনিবার (৩০ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, লেবাননের রাষ্ট্রদূতকে সৌদি আরব ছাড়ার জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে এবং বৈরুতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে পরামর্শ করার জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, লেবানন থেকে যেকোনো ধরনের পণ্য আমদানির ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সৌদি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, লেবানন কর্তৃপক্ষের ভুল পদক্ষেপের কারণে রিয়াদ ও বৈরুতের মধ্যে সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে তার জন্য সৌদি সরকার দুঃখিত। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব লেবাননের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাইলেও লেবানন কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে উপেক্ষা করার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
এদিকে লেবানন থেকে সৌদি আরবে যেসব মাদক চোরাচালান হয়ে আসছে তা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বৈরুত কর্তৃপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে বলেও সৌদি আরব অভিযোগ করেছে। পাশাপাশি লেবাননে সৌদি নাগরিকদের ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছে রিয়াদ সরকার।
আলজাজিরা টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লেবাননের তথ্যমন্ত্রী জর্জ কোরদাহি বলেছেন, ইয়েমেনে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের আগ্রাসন ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধ করার সময় হয়েছে।
লেবাননের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার আগে গত ৫ আগস্ট কোরদাহি এই সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং গত সোমবার তা সম্প্রচার করা হয়। তার এ বক্তব্যের জের ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং কুয়েতে নিযুক্ত লেবাননের রাষ্ট্রদূতদেরকেও তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়।
অন্যদিকে সৌদি আরবের সিদ্ধান্তের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একই কারণে মানামাতে নিযুক্ত লেবাননের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের আদেশ জারি করে বাহরাইন কর্তৃপক্ষ। বাহরাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশ ত্যাগের জন্য লেবাননের রাষ্ট্রদূতকে দুই দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের শুরুর দিকে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার মুখে সৌদি-সমর্থিত ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আব্দ রাব্বু মনসুর আল হাদি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। ক্ষমতাচ্যুত এই প্রেসিডেন্টকে ফেরাতে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ইয়েমেনে হুথিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে।
অভিযানের শুরুর পর ইয়েমেনের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হওয়ার পরিবর্তে তা আরও তীব্র হয়ে ওঠে। বর্তমানে ইয়েমেনে কার্যত দুই শাসকগোষ্ঠী সক্রিয় আছে। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সামরিক সহযোগিতার ওপর ভর করে দেশটির দক্ষিণাঞ্চল এখনও মনসুর হাদির নেতৃত্বাধীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে, অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে হুথি বিদ্রোহীরা।
ইয়েমেনের এই সংঘাতকে মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্যের লড়াইয়ে সৌদি-ইরানের ‘ছায়াযুদ্ধ’ হিসেবে দেখা হয়। টানা গৃহযুদ্ধ ও সংঘাত চলার ফলে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এবং এক সময়ের স্বচ্ছল এই দেশ।
বিএসডি/এসএসএ