নিজস্ব প্রতিবেদক,
বাগেরহাটের শরণখোলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট এখন এলাকাবাসীর মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে উপজেলার ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ফসলের ক্ষেত, মাঠ, পুকুর, রাস্তা-ঘাট, এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নির্মাণাধীন বেড়ি বাঁধে অপরিকল্পিত ও অপর্যাপ্ত স্লুইস গেটের কারণে এ অবস্থা বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের (সিআইপি) আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারে বাঁধ পুননির্মাণের কাজ করছে চায়নার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু নির্মিত বাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইস গেট রাখা হয়নি। এমনকি যেসব স্লুইস গেট নির্মাণ করা হয়েছে তা অপরিকল্পিত ও আগের চেয়ে সরু।
এ অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে লগুচাপের প্রভাবে গত ২৭ জুলাই থেকে টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে শরণখোলা উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। কিন্তু স্লুইস গেটগুলো দিয়ে পর্যাপ্ত পানি নামতে না পারায় মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় রান্নাবান্নাসহ মানুষ দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। এছাড়া আমনের বীজতলা, রোপা আউশ এবং সবজিসহ অন্যান্য মৌসুমী ফসল শতভাগই পানির নিচে তলিয়ে যায়।
এদিকে শনিবার দুপুরে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৌদ্ধ শরণখোলায় পরিদর্শনে আসলে তার কাছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানিবন্দি শত শত মানুষ দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মাণের দাবি জানান। এসময় নির্বাহী প্রকৌশলী বিষয়টি উর্ধ্বতন কৃর্তপক্ষকে জানাবেন বলে আশ্বাস দেন।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে একইদিন রাত ৮টায় সংকট নিরসনে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চার ইউপি চেয়ারম্যান, সিআইপি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাহী কর্মকর্তা খাতুনে জান্নাত বলেন, অতিবৃষ্টিতে বর্তমানে শরণখোলায় ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এঅবস্থা থেকে স্থায়ী সমাধানের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে একটি সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। সুপারিশগুলো জেলা পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপিত হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে সোমবার একনেকের সভায় উপস্থাপনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে একটি সুপারিশ পাঠানো হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত বলেন, নির্মাণাধীন বেড়ি বাঁধের স্লুইসগেটগুলো আগের তুলনায় অনেক ছোট এবং অপর্যাপ্ত। তাই একটি লকগেট এবং কমপক্ষে আরো সাতটি বড় স্লুইসগেট নির্মাণ করা হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমল হোসেন মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিলন, সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল হোসেন, খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন, রায়েন্দা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ রশিদ আকন জানান, গত ২০ বছরেরও শরণখোলাবাসী এমন জলাবদ্ধতা দেখেনি। অপরিকল্পিত স্লুইসগেটের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত পরিকল্পিত এবং পর্যাপ্ত স্লুইসগেট নির্মাণ করা না হলে শরণখোলার মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাবে।
বিএসডি/আইপি