কৃষি ডেস্ক,
যশোরের শার্শায় আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিং মাছের চাষ করে লাভের আশা করছেন তিন বন্ধু। স্বশিক্ষিত ও বেকার তিন বন্ধু হলেন শিবচন্দ্রপুর ওয়াপদাহ খাল পাড়ের বাসিন্দা মৃত রায়হন সর্দ্দারের পুত্র আব্দুর রশিদ, স্বরুপদাহ গ্রামের মৃত মতলেব বিশ্বাসের পুত্র আফতাব হোসেন ও মতিয়ার রহমানের পুত্র সোহাগ।
বন্ধুদের মধ্যে আব্দুর রশিদ ভারতের মহারাষ্ট্রের বেলাপুর একটি প্রতিষ্ঠিত মৎস্য খামারে ৫ বছর চাকরি করেন। চাকরি করার সুবাদে শিং মাছ চাষ করার প্রযুক্তি সম্পর্কে তিনি অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। বাড়ি ফিরে ৩ বন্ধু মিলে দীর্ঘদিন চেষ্টা করে ১৫ কাঠা জলাকার একটি পুকুর লিজ নিয়ে এ বছরের মার্চ মাসে পুকুর তৈরি করে মাছের রেনু পোনা ছাড়েন। চরম অর্থ কষ্টের মাধ্যমে শুরু হয় তাদের যাত্রা। নিজেদের তৈরি করা খাদ্য ও মাঝে মাঝে কিছু ফিড দেওয়া হয়। এক মাসে এক লাখে এক কেজি ছিল বর্তমানে ৫০টি মাছে কেজিতে দাঁড়িয়েছে। কোন প্রকার সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তারা এ মাছ চাষে আত্মনিয়োগ করেন।
তিন বন্ধুর ভাষ্য মতে শিং মাছের চাষ যারা করেছেন কেউ প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি। তবে আমরা চেষ্টা করছি প্রতিষ্ঠিত হব ইনশাল্লাহ। শিবচন্দ্রপুর গ্রামের সাহিদুলের কাছ থেকে পুকুরটি লীজে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পুকুর তৈরি করে ময়মনসিংহ থেকে উন্নত জাতের শিং মাছের রেনু পোনা সংগ্রহ করে ছাড়েন। নিজেদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে মেশিন দ্বারা খাদ্য তৈরি করে মাছের খাদ্য দেন। খাদ্য তৈরি করার সময় বয়লার ও পোল্টির মুরগির নাড়ী, কেচো, শামুক, লবণ, খৈল, চিটা গুড় ও মধুর সংমিশ্রণে হাইপ্রোটিন জাতীয় খাদ্য তৈরি করা হয়।
আব্দুর রশিদ জানান, শিং মাছ ২ থেকে ৩ মাস পর পরিচর্যার ত্রুটির কারণে লেজ বাকিয়ে যায়। যে কারণে মাছের গ্রোথ আসে না। শিং মাছের চাষ যেই করুক না কেন পরিচর্যা না জানার কারণে সেই চাষি কখনই সফল হবেন না। আমরা তিন বন্ধু শিং মাছ চাষ চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছি। আমরা অবশ্যই সফল হব। এক বিঘা জলাকার একটি পুকুর লিজ নিয়ে ওই পুকুরে অর্ধৈক মাছে কাটাই করে তাদের পরিচর্যা করা হচ্ছে। পরিচর্যার মধ্যেমে নিয়মিত পানি পরিষ্কার করা হয় ২ মাস পর্যন্ত। পুকুর থেকে মাছের মল পরিষ্কার করা, প্রতিদিন হড়া টানা, অক্সিজেন সংকট দেখা দিলে পানির ঝর্ণা দিয়ে ঠান্ডা পানি দেওয়া, কৃত্রিম স্রোত দেওয়া, প্রতিদিন রাতে পরিমাণমত খাদ্য, সকালে ভাসমান খাদ্য, সর্ব শেষ স্যালো মেশিনের পাইপ দ্বারা পুকুর থেকে মল পরিষ্কার ও পানি পরিষ্কার করার পর খাদ্য দিতে হবে।
তিনি আরও জানান, আমাদের এ পর্যন্ত তিন লাখ টাকা মত খরচ হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা পেলে আমরা সফল চাষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আশাবাদী। শার্শা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমাদের মাছ চাষ দেখে গেছেন এবং আমাদের কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। প্রতিটি মাছ একশ গ্রাম হলে ২টি পুকুরের মাছ ১০ লাখ টাকা বিক্রি করা যাবে এবং আমাদের ৭ লক্ষ টাকা মুনাফা অর্জন সম্ভব হবে।
বিএসডি/এএ