আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে সৃষ্ট আতঙ্কের মধ্যেই দক্ষ অভিবাসনপ্রত্যাশী এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সীমান্ত খুলে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) থেকে সীমান্ত উন্মুক্ত করল দেশটি।
তবে কেবল করোনা টিকার ডোজ সম্পন্ন করা শিক্ষার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশীরাই অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারবেন। করোনা সংক্রান্ত লকডাউন ও নানা বিধিনিষেধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অস্ট্রেলীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্যানবেরা।
অবশ্য সপ্তাহ দু’য়েক আগেই আন্তর্জাতিক ভ্রমণ উন্মুক্ত করার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়ার। তবে সেসময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ায় এবং বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সেটি দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়।
এই সময়ের মধ্যে ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের বিষয়ে আরও তথ্যের অপেক্ষায় ছিলেন কর্মকর্তারা। তবে করোনার পূর্ববর্তী ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রনে হালকা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় বা দুর্বল মনে হওয়ায় বুধবার সীমান্ত খুলে দিলো দেশটি।
এদিকে সীমান্ত খোলার পরপরই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সিডনিতে পৌঁছান ক্যাং জিন নামে এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘চার বছরের মধ্যে মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমি আমার মায়ের সাথে দেখা করলাম। আমি অনেক খুশি এবং সীমান্ত খোলার জন্য অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।’
বিদেশিদের জন্য সীমান্ত খোলার এই সিদ্ধান্ত এমন এক দিনে নেওয়া হলো যখন অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ নিউ সাউথ ওয়েলসে চার মাসের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলছেন, ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো ভালো অবস্থানে আছে সরকার।
তিনি আরও বলেন , আমরা ভাইরাসের সঙ্গে বসবাস করতে যাচ্ছি। আমরা কোনোভাবেই আর আগের অবস্থানে ফিরবো না। অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘টিকাদানের হারে বিশ্বে সর্বোচ্চ অবস্থানে যে দেশগুলো রয়েছে, তাদের একটি আমরা। এর অর্থ আমরা ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করতে পারবো। আমাদেরকে আত্মসমর্পণ করতে হবে না।’
১৬ বছর থেকে শুরু করে এর বেশি বয়সী প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষকে ইতোমধ্যেই করোনা টিকার দু’টি করে ডোজের আওতায় এনেছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়ার অন্তর্বর্তী সময়ও কমিয়ে এনেছে দেশটি।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারি রুখতে ২০২০ সালের মার্চ থেকে সীমান্ত সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করেছিল অস্ট্রেলিয়ার সরকার। এ বিষয়ক সরকারি আদেশে সেসময় বলা হয়েছিল, মৃত্যুশয্যায় শায়িত নিকটাত্মীয়কে শেষ দেখা বা এ জাতীয় অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত কোনো নাগরিক বাইরের কোনো দেশে যেতে পারবেন না।
একইভাবে, বাইরের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত অস্ট্রেলীয় নাগরিকদের নিজ দেশে প্রবেশের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম জারি করা হয়। আর অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়া ত্যাগের সুযোগ রাখা হলেও বাইরের দেশের ভ্রমণকারীদের প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
তবে গত ১ ডিসেম্বর থেকে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য সীমান্ত খোলার ঘোষণা দেয় অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য এর আগেই আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশগুলোতে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত ও বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে সীমান্ত খোলার সময়সীমা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে যায় এবং বুধবার চূড়ান্তভাবে সীমান্ত উন্মুক্ত হয়।
সূত্র: রয়টার্স।
বিএসডি /এলএল