নিজস্ব প্রতিবেদক,
যেকেউ করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন, এমনকি শিশুরাও। করোনার সংক্রমণ রোগীর জীবনকে চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করাতে পারে। বর্তমানে দেশে দেশে ভয়ংকর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের রাজত্ব চলছে।
এসময় শিশুরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে, কারণ অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এখনো পর্যন্ত শিশুদের জন্য করোনার টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব শিশুর স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও হাঁপানি রয়েছে তাদের কোভিড-১৯ জনিত গুরুতর অসুস্থতার উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।
চিকিৎসকেরা জানান, রেসপিরেটরি সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে সংক্রমণ তৈরি করে।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, প্রত্যেক শিশুই ২ বছর বয়সের মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদেরও সংক্রমণটি হতে পারে। শরৎ ও শীতে আরএসভি সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। সংক্রমণটি ব্যাপক ছোঁয়াচে।
সাধারণত আরএসভি সংক্রমণের উপসর্গ মৃদু প্রকৃতির হয়ে থাকে। কেবল কোভিড-১৯ নয়, ঠান্ডা জনিত উপসর্গের সঙ্গেও আরএসভি সংক্রমণ জনিত উপসর্গের বেশ মিল আছে। আরএসভিতে সংক্রমিত অধিকাংশ লোকই এক-দুই সপ্তাহে সেরে ওঠেন, কিন্তু শিশু ও বয়স্করা মারাত্মক জটিলতায় ভুগতে পারে। এক বছরের কম বয়সী শিশুদের ব্রঙ্কাইটিস ও নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ হলো আরএসভি। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, কোভিড-১৯ ও আরএসভি সংক্রমণের সমন্বয় শিশুদের জন্য প্রাণনাশক হতে পারে।.
* কোভিড-১৯ ও আরএসভির দ্বৈত সংক্রমণ কি সম্ভব?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ একইসময়ে দুটি ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। এটার আলোকে বলা যায়, একইসময়ে একটা শিশু কোভিড-১৯ ও আরএসভি সংক্রমণে ভুগতে পারে। কিছু গবেষণাও এমনটা ধারণা দিয়েছে। এই দ্বৈত সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আরো গবেষণার অপেক্ষা করতে হবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় ৭৮ জন রোগীর মধ্যে ১১ জনের দ্বৈত সংক্রমণ ছিল। এই ১১ দ্বৈত সংক্রমণের মধ্যে চারজনের কোভিড-১৯ ও আরএসভি সংক্রমণ ছিল। একারণে চিকিৎসকেরা চলমান মহামারিতে দুর্বল ইমিউন সিস্টেম ও টিকা না নেওয়া লোকদেরকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন। অভিভাবকদেরও শিশুদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে, যেহেতু তাদের জন্য সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকার ব্যবস্থা নেই। তাদেরকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব বোঝাতে হবে।
* আরএসভির উপসর্গ
করোনাভাইরাস ও আরএসভি উভয়েই ফুসফুস বা শ্বাসনালীকে আক্রমণ করে থাকে। তাই আরএসভির উপসর্গকে কোভিড-১৯ অথবা করোনা সংক্রমণের উপসর্গকে আরএসভির উপসর্গ মনে হতে পারে। করোনায় আক্রান্ত শিশুর কিছু প্রচলিত উপসর্গ হলো- জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, দুর্বলতা, পাতলা পায়খানা ও বমি। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের প্রতিবেদন অনুসারে আরএসভি সংক্রমণের কিছু উপসর্গ হলো-
* সর্দি/নাক থেকে পানি পড়া
* খেতে না চাওয়া
* কাশি
* হাঁচি
* জ্বর
* শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় শব্দ হওয়া।
* কোভিড-১৯ নাকি আরএসভি, কীভাবে বুঝবেন?
শিশু হোক বা প্রাপ্তবয়স্ক হোক, উপসর্গ দেখে কোনো রোগ সম্পর্কে ধারণা করা যেতে পারে। কিন্তু এমনও কিছু রোগ বা সংক্রমণ রয়েছে যেগুলোর উপসর্গের মধ্যে বেশ সাদৃশ্যতা রয়েছে- এসব ক্ষেত্রে ঠিক কি হয়েছে তা অনুমান করা একজন সাধারণ মানুষের পক্ষে কঠিনই বটে। যেহেতু কোভিড-১৯ ও আরএসভি উভয়েই শ্বাসতন্ত্রের রোগ, তাই অধিকাংশ প্রাথমিক উপসর্গ একই ধরনের হতে পারে। তাহলে কোভিড-১৯ নাকি আরএসভি সংক্রমণ হয়েছে বোঝা যাবে কীভাবে?
শিশুর আরএসভি সংক্রমণ নাকি কোভিড-১৯ হয়েছে তা সম্পর্কে ধারণা পেতে বিশেষজ্ঞরা কিছু উপায় বলে দিয়েছেন।শিশু করোনায় আক্রান্ত হলে আরএসভির সঙ্গে মিল রয়েছে এমন উপসর্গ ছাড়াও পাতলা পায়খানা, বমি ও পেট ব্যথার মতো পরিপাকতান্ত্রিক সমস্যা হতে পারে। ত্বকে র্যাশ বা ফুসকুড়িও ওঠতে পারে। এছাড়া স্বাদ ও ঘ্রাণ অনুভবের ক্ষমতা হারাতে পারে। সাধারণত আরএসভিতে আক্রান্ত শিশু এসব উপসর্গে ভুগে না। শিশুর প্রকৃত সংক্রমণ নির্ণয়ের সর্বোত্তম উপায় হলো টেস্ট করানো। শিশুর কোভিড-১৯ এর কোনো উপসর্গ থাকলে টেস্টের ব্যাপারে দ্বিধা করা উচিত নয়।
বিএসডি/আইপি