বিনোদন ডেস্ক:
মাধবী মুখোপাধ্যায়
রোজই তাঁর শরীরের খবর নিতাম। গতকালই [পরশু] একমাত্র খোঁজ নিতে পারিনি। আর আজকে [গতকাল] তাঁর প্রয়াণের খবর। কী বলব জানি না।অনেক কিছু মনে পড়ছে। ওঁর প্রয়াণে বাংলা সংগীত জগতের স্বর্ণযুগের শেষ। এই শূন্যতা কোনো দিন পূরণ হবে না।
রাঘব চট্টোপাধ্যায়
অভিভাবক হারালাম। অনেক কথা মনে পড়ছে। আমার ফোনে এখনো তাঁর ভয়েস রেকর্ডিং রয়েছে। গান নিয়ে প্রচুর কথা হতো। আমি মন দিয়ে শুনতাম। অনেক আলোচনা করতাম। আমাকে অনেক সময়ই গাইড করেছেন তিনি। ওঁর প্রত্যেকটা অনুষ্ঠানে আমি যেতাম। মন ভরে গান শুনতাম। আমাকে খুবই ভালোবাসতেন তিনি। আমার ফোনে থাকা তাঁর কণ্ঠ রয়ে গেল। অমূল্য সম্পদ।
সৈকত মিত্র
সংগীতজগৎ আজ শূন্য হয়ে গেল। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় তো আর শুধুই বাংলার সম্পদ নয়, গোটা বিশ্বের। আমরা অভিভাবকহীন হয়ে গেলাম। ছোটবেলা থেকে যেমন দেখেছি, শেষ দিন তেমনই ছিলেন সন্ধ্যা পিসি। খুবই খারাপ লাগছে।
হৈমন্তী শুক্লা
শিল্পীদের কাছে তিনি তো অভিভাবকসম। সাক্ষাৎ সরস্বতী। এই শূন্যতা পূরণ হবে না। ওঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। তবে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মতো শিল্পীদের প্রয়াণ হয় না। সারা জীবন বেঁচে থাকেন।
আরতি মুখোপাধ্যায়
কী বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ‘কেমন আছিস? গানবাজনা কেমন চলছে?’ এসব খোঁজ নেওয়ার মানুষটি হারিয়ে গেল। আর কথা হবে না, এটা ভাবতেই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে।
অভিজিৎ ভট্টাচার্য
আমাদের দেশে যাঁরা সরস্বতী ছিলেন, তাঁরা একে একে চলে গেলেন। প্রথমে লতা মঙ্গেশকর। আর এবার সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আমরা বিশ্বরত্ন হারালাম। তবে লতাজি, সন্ধ্যাজির মতো কিংবদন্তি শিল্পীদের মৃত্যু হয় না। চিরকাল এঁরা অমর হয়ে থাকেন। আমার এখনো মনে আছে, আমাকে একবার তিনি বলেছিলেন, তুমি খুব মিষ্টি গাও।
কুমার শানু
খবরটা পেয়েই মন খারাপ হয়ে গেল। সংগীত জগৎ তাঁর রত্ন হারাল। আমরা শিল্পীরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়লাম।
গতকাল মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় । তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।
ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন গীতশ্রী।
এরপর করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তিরত করা হয় বাইপাসের কাছে এক বেসরকারি হাসপাতালে। কিছুদিনের মধ্যেই কভিডমুক্ত হন তিনি। কোমরের ভাঙা হাড়ের অস্ত্রোপচার হয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি। সোমবার রাত থেকে শুরু হয় পেটে ব্যথা, কমতে থাকে রক্তচাপ।
মঙ্গলবার সকালে তাঁর অবস্থা সংকটজনক হওয়ায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল আইসিইউতে। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
বাংলা গানের স্বর্ণযুগের অন্যতম কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ ছিল কয়েক প্রজন্ম। ৫০ বছরেরও বেশি সময় নানা ভাষার ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন তিনি। ছবির গানের পাশাপাশি বাংলা আধুনিক গান ও ধ্রুপদি সংগীতেও তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।
১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর সংগীত শিক্ষার মূল কাণ্ডারি ছিলেন তাঁর বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৫ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে প্রথম গান রেকর্ড করেন তিনি। কলম্বিয়া থেকে তাঁর প্রথম রেকর্ড করা গান গিরীন চক্রবর্তীর কথায় ও সুরে ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’। ১৯৪৮ সালে প্রথমবার রাইচাঁদ বড়ালের সংগীত পরিচালনায় প্লেব্যাক করেন। ছবির নাম ‘অঞ্জনগড়’। সে বছর আরো তিনটি আধুনিক গান রেকর্ড করে সংগীতজগতে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন ভবিষ্যতের কিংবদন্তি।
১৯৭১ সালে ‘জয় জয়ন্তী’ ও ‘নিশিপদ্ম’ ছবিতে গান গেয়ে শ্রেষ্ঠ গায়িকা হিসেবে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। ২০১১ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘বঙ্গবিভূষণ’ উপাধিতে সম্মানিত করে। আর ২০২২ সালে পদ্মশ্রী সম্মান প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।