বর্তমান সময় ডেস্ক:
হাবল স্পেস টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে ২৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের এক নক্ষত্র। নক্ষত্রটির আকার সূর্যের চেয়ে ৫০ থেকে ৫০০ গুণ, আর এর উজ্জ্বলতা লাখ লাখ গুণ বেশি বলে ধারণা করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
বুধবার ন্যাচার জার্নালে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নক্ষত্রটি এতটাই দূরে যে, এটি থেকে পৃথিবীতে আলো পৌঁছাতে ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন বছর লেগেছে।
নক্ষত্রটি বিগ ব্যাংয়ের (মহাবিস্ফোরণ) ৯০০ মিলিয়ন বছর পর গঠিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিএনএন জানায়, এর মধ্যে দিয়ে হাবলের ২০১৮ সালের দূরবর্তী নক্ষত্র পর্যবেক্ষণের রেকর্ড ভেঙে গেল।
বাল্টিমোরের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রায়ান ওয়েলশ এটিকে ‘সানরাইজ আর্ক’ বলে উল্লেখ করেছেন। অনেকে এই নক্ষত্রকে ‘ইরেন্ডেল’ নামে ডাকছেন। পুরোনো এই ইংরেজি শব্দের অর্থ ভোরের আলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন এই পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মহাবিশ্বের প্রাথমিক সময় সম্পর্কিত গবেষণায় সহায়তা করতে পারে।
ডেনমার্কের কোপেনহেগেন কসমিক ডন সেন্টারের একটি পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণার সহ-লেখক ভিক্টোরিয়া স্ট্রেইট বলেন, ‘আমরা যখন মহাবিশ্বের দিকে তাকাই, তখন আমরা সময়কেও পর্যবেক্ষণ করি। এই উচ্চ-রেজুলেশন পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা প্রথম দিককার ছায়াপথগুলোর গঠন সম্পর্কে ধারণা করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘যখন আমরা ইরেন্ডেল দেখতে পাই, তখন মহাবিশ্বের বয়স ১ বিলিয়ন বছরেরও কম। অর্থাৎ তখন মহাবিশ্ব তার বর্তমান বয়সের মাত্র ৬ শতাংশ সময় পার করেছিল। তখন এটি আমাদের ছায়াপথ মিল্কিওয়ে থেকে ৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে ছিল।’
ইরেন্ডেল থেকে পৃথিবীর কাছে আলো পৌঁছাতে ১৩ বিলিয়ন বছর লেগেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ সময়ের মধ্যে মহাবিশ্ব এতটা প্রসারিত হয়েছে যে, নক্ষত্রটি আমাদের থেকে এখন ২৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে আছে,’ বলেন এই বিজ্ঞানী।
জনস হপকিনসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ব্রায়ান ওয়েলশ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সাধারণত এই দূরত্বের ছায়াপথগুলো ছোট ছোট দাগের মতো করে দেখা যায়। ছায়াপথের লাখ লাখ নক্ষত্রের আলো একসঙ্গে চলে আসার ফলে এমন হয়।’
তিনি বলেন, ‘নতুন এই নক্ষত্রের ছায়াপথটিকে আমরা মহাকর্ষীয় লেন্সিংয়ের মাধ্যমে বিবর্ধিত ও বিকৃত অবস্থায় দেখেছি। আমরা যার নাম দিয়েছি “সানরাইজ আর্ক”।’
আমরা রাতের আকাশে যে নক্ষত্রগুলো দেখি, সেগুলো মিল্কিওয়ের অন্তর্গত। শক্তিশালী টেলিস্কোপ দিয়ে আশেপাশের ছায়াপথের নক্ষত্র দেখা যায়। কিন্তু দূরবর্তী ছায়াপথগুলো ঝাপসা হয়ে ধরা দেয়।
দূরের নক্ষত্র থেকে আলো আসার সময় কাছাকাছি কোনো বস্তুতে বাধা পেলে সেখানে মহাকর্ষীয় লেন্স তৈরি হয় এবং সেখান থেকে আলো বিচ্যুত হয়ে এসে টেলিস্কোপে নক্ষত্রের আলো পড়ে।
বহু দূরের ছায়াপথের খোঁজ এভাবেই পাওয়া গেছে।
এ ক্ষেত্রে, ইরেন্ডেলের আলো হাজার গুণ হয়ে মহাকর্ষীয় লেন্সিং পদ্ধতিতে হাবলের ওপর ৯ ঘণ্টা ধরে পড়েছে। আর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তা পর্যবেক্ষণ করে এই দূরবর্তী নক্ষত্র সম্পর্কে জানতে পেরেছেন এবং আমাদের জানিয়েছেন।
এটি মহাবিশ্বের প্রথম দিকে গঠিত হওয়ায় বিজ্ঞানীরা এখন এই নক্ষত্রের গঠন সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছেন।
বিএসডি/ এলএল