নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিদেশে রফতানি যোগ্য উন্নত জাতের আলু চাষের পথে হাঁটছে দেশ। বিদেশি চাহিদা মতো আলু উৎপাদনের লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে রাজশাহীর তানোরে ২২টি জাতের আলু নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করছে এগ্রিকনসার্ন। এর মধ্যে ২০টি জাতের আলু একইবারে নতুন। এই জাতের আলুর বীজ পরীক্ষামূলক চাষাবাদে ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তানোর উপজেলার কামারগাঁও এলাকার হরিপুরে পরীক্ষামূলক ৩০০ একর জমিতে ২২টি নতুন জাতের আলু চাষ করেছে এগ্রিকনসার্ন। তারা বলছেন কিটনাশক ও সেচ কম লাগেছে আলু চাষে। শুধু তাই নয়, অল্প সময়ের মধ্যে জমি থেকে এই জাতের আলু তোলা সম্ভব। এবছর পুরো তানোর উপজেলায় বিভিন্ন জাত মিলে ১৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা জানান, ‘জেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ আলু কৃষক ঘরে তুলেছে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, আলুর ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এবছর রোগ বালাই কম ছিল।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে ৩৫ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল। আর উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালে জেলায় জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬ হাজার ৬২৯ হেক্টর। এই হিসাবে আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন।
তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে কামারগাঁও এলাকার হরিপুরে পরীক্ষামূলক ৩০০ একর জমিতে ২২টি নতুন জাতের আলু চাষ করেছে এগ্রিকনসার্ন। এখানে নেদারল্যান্ড ও জার্মানিতে থেকে আনা আলুর জাতগুলো পরীক্ষামুলক চাষ করা হয়েছে। আলুর জাতগুলো হলো সানসাইন, ৭ ফোর ৭, গ্রানোলা, কুইন এ্যানি, লাবেলা, অক্টো, প্রাডা, ওলাপ, মার্টা, পাইজেনও, প্রিন্সেস, ফোরজা, টাইসিয়া, গায়া, আল্ট্রা, কুম্বিকা, ডোনাটা, জুলিংকা ও জেলি। এই জাতগুলোর একেটির একেক রকমের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। কোনো আলু দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি থেকে উত্তোলন করা যাবে। কোনো কোনো আলুতে সেচ বা কীটনাশক কম প্রয়োগ করতে হয়।
তানোর নতুন ২২টি জাতের আলু নিয়ে কাজ করা এগ্রিকনর্সান’র অ্যাডভাইজার ড. জতিস চন্দ্র সরকার জানান, ‘নতুন জাতের মোট ২০টি আলু। আগের দু’টি জাত নিয়ে মোট ২২টি আলুর জাত নিয়ে আমরা কাজ করিছ। স্থানীয় জাতের তুলনায় অনেক ভালো ফলন হবে আশা করছি। এই আলুগুলো পরীক্ষামূলক দেশের পাঁচটি জেলায় চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ফার্মও রয়েছে। সেগুলো হলো দিনাজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মুস্মিগঞ্জ, পটুয়াখালী ও গলাচিপা। এইসব জাগায় আলু পরীক্ষামূলক চাষে ফলন অনেক ভালো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমাদের চাষীরা যে আলু চাষাবাদ করছে সেগুলো অনেক পুরোনো। কমপক্ষে ৩০ বছর আগের। সব আলুর জাত এগিয়ে গেলেও আমরা এগুতে পারিনি। তবে নতুন জাতের এই আলুগুলো সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। কারণ এই আলুগুলোর ফলন বেশি; বিদেশে রফতানি উপযোগী। বিদেশে যে ধরনের আলুর চাহিদা বেশি; সেই আলু এগুলো। এর মধ্যে উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে টাইসিয়া। এই জাতের আলু প্রতি হেক্টরে ৬০ টন উৎপাদন হবে। অল্প দিনের জমিতে উঠবে সানসাইন ও প্রাডা। এই দুই জাতের আলু ৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে জমি থেকে তোলা সম্ভব। শুধু তাই নয়, একেকটি জাতের একেক ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
উপদেষ্টা ড. জতিস চন্দ্র সরকার জানান, তানোরে ২২ জাতের আলুর মধ্যে সানসাইন ৩০ একর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এছাড়া ৭ ফোর ৭ চাষ করা হয়েছে ৩০ একর, গ্রানোলা ৭০ একর, কুইন এ্যানি ২০ একর, লাবেলা ৮ একর, অক্টো ২ একর, প্রাডা ২ একর জমিতে চাষ করা হয়েছে।
বিএসডি/ এলএল