নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “গণতন্ত্রকে পেতে হলে, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে, জনগণের অধিকারগুলো ফিরে পেতে হলে ত্যাগ স্বীকার করেই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পতাকাকে উর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। এই সরকারের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে না এনে, অধিকারকে ফিরিয়ে না এনে ঘরে ফিরে যাব না।” এ ব্যাপারে সকলে একমত কিনা জানতে চেয়ে নেতাকর্মীদের ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাবের পর বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চলেন আমরা সেই পথে এগিয়ে চলি। ৭ নভেম্বরের এই শপথ সফল হোক।’
সোমবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির উদ্যোগে ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস উপলক্ষে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে এক উম্মুক্ত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন। এসময়ে নেতাকর্মীদের হাতে জাতীয় পতাকা ছিলো। একইভাবে সারাদেশের জেলা, মহানগর ও থানা-উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এক দফা এক দাবি, সরকারের পদত্যাগ। দফা এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে এবং নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের একটা সরকার গঠন হবে।’
৭ নভেম্বরকে তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মাত্র চার বছরের মধ্যে বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তিনি মুক্ত অর্থনীতি নিয়ে এসেছিলেন, তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন এবং দেশে তিনি বাক স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এই অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্রজাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নটা হচ্ছে একটা জাতি হিসেবে তৈরি হওয়ার স্বপ্ন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৯৭৫ সালের মতো আবার অলিখিত বাকশাল চলছে, বাংলাদেশে ঠিক একই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। তারা এই সরকারকে আর চায় না।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে এই লুটেরা সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ঢাকায় ১০ তারিখের মহাসমাবেশের আগেই ঢাকার আশেপাশে মামলা হামলা হচ্ছে। এভাবে জনগণের আন্দোলন স্তব্ধ করা যায় না। সরকারের লুটপাটের কারণে খুব তাড়াতাড়ি ব্যাংকগুলো দেউলিয়া ঘোষণা করবে, আমানতকারীরা রাস্তায় নামবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ জনগণের সরকার চায়। লুটপাট শাসন চায় না। তাই তারাই এই সরকারের পতন ঘটাবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে ৭৫-এর খুনিরা।’
বিএনপি জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রভাগে কল্যাণ পার্টির অবস্থান থাকবে।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালামসহ ছাত্রদল, যুবদলের নেতারা বক্তব্য দেন।
এর আগে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও বাংলাদেশকে ফিরে পাওয়ার জন্য ও অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করছি। এই লড়াইকে আরও এগিয়ে নেব।’
এসময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে একে একে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, মৎস্যজীবী দল, জাসাস, কৃষকদল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন, ইউট্যাব, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) ও এমট্যাবসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পক্ষে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিএসডি/এফএ