জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, ঋণ বাণিজ্য ও সুদ মওকুফ বাণিজ্যসহ অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪৮৩ কোটি টাকা পাচারের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন আমানতকারীরা।
সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে এক মানববন্ধনে আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার দাবি জানিয়েছেন তারা।
একই সঙ্গে আজিজুর রহমান আজাদ নামের এক ব্যক্তির সই করা একটি স্মারকলিপি আমানতকারীরা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। স্মারকলিপিতে ব্যাংকটির দীর্ঘদিনের সুনাম ও হাজার হাজার গ্রাহকের আমানত রক্ষায় নিরপেক্ষ তদন্তেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সৌদি প্রবাসী আলমগীর ছিলেন ব্যাংকটির সাধারণ শেয়ারহোল্ডার। সময়ের ব্যবধানে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান বনে গেছেন তিনি। ধীরে ধীরে ছেলে রাইয়ান কবিরসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি চক্র, যার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটিকে লুটেপুটে খাচ্ছেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, জালিয়াতি, দুর্নীতি ও কারসাজির মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করেছেন। তিনি কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং দুবাইতে অর্থপাচার করেছেন। পাচার করা অর্থে এসব দেশের অভিজাত এলাকায় গড়ে তুলেছেন বাড়ি। দুবাইতে আছে বিলাসবহুল হোটেল ও বার। রাজধানী ঢাকার গুলশানে তিনটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ছাড়াও রয়েছে ব্যক্তিগত অফিস। গাজীপুরে বাড়ি ছাড়াও শ্ৰীপুর, ভাওয়াল এবং কাঁচপুরে অন্তত ১৫০ বিঘা জমি কিনেছেন। ব্যাংকে করেছেন স্বজনপ্রীতি। শাখাগুলোতে ফার্নিচার কিনতে পছন্দের কোম্পানি (জার্নিম্যান) নিয়োগ করেছেন। যেখানে প্রতিটি চেয়ারের দাম রাখা হয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা, কম্পিউটার টেবিলের দাম ধরা হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। নিজের ভাগনের কোম্পানির মাধ্যমে ফার্নিচার কেনার নামে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। জার্নিম্যান নামে ওই ফার্নিচার কোম্পানির এক কোটি টাকা সুদও মওকুফ করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, নামে-বেনামে তার রয়েছে আরও একাধিক বাড়ি-ফ্ল্যাট ও প্লট।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, আলমগীর কবিরের নিকটাত্মীয়ের (বেয়াই) মালিকানাধীন লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেডকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ৫৪ কোটি টাকার অধিক সুদসহ ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। কমিশন সুবিধা নিয়ে এক হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের অভিযোগও রয়েছে আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে। যেসব ঋণের বিপরীতে পাঁচ বছর কোনো সুদ দিতে হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাজ ভূঁইয়া গ্রুপের ৩০০ কোটি টাকা, সুয়াদ গার্মেন্টসের ১৫ কোটি, ফাহমি নিটের ৩০০ কোটি, কেয়া গ্রুপের ৯০০ কোটি এবং মাহাবুব স্পিনিংয়ের ১৫০ কোটি টাকা উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির গ্রাহকদের মধ্যে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেন অভিযোগ করে বলা হয়, এগুলোর বিপরীতে পাঁচ বছরে কোনো প্রকার সুদ না দেওয়ার সুবিধা দিয়েছেন তিনি। তারপরও ক্লায়েন্টের ঋণের টাকা তাদের ‘সুদমুক্ত ব্লকড অ্যাকাউন্ট’-এ দিয়ে দেওয়া হয়। কারসাজির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত কোট টাকা কমিশন নেয়ার অভিযোগও তোলেন তারা।
অযোগ্য হয়েও ব্যাংকটি থেকে গোপাল আগরওয়ালা ও তার স্ত্রী দীপা আগরওয়ালা ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ভারতে পালিয়েছেন। তারা সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখার গ্রাহক ছিলেন। এই জালিয়াতিতে আলমগীর কবিরের হাত রয়েছে। তিনি মূলত আগারওয়ালা দম্পতিকে কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভারতে পাচার করেছেন। কলকাতা এবং চেন্নাইতে তার একাধিক বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় জমিজমাও রয়েছে। গোপাল আগারওয়ালা বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার জগন্নাথ নগরে জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে অটোরাইস মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। দীপা আগারওয়ালা একই স্থানে ‘মেসার্স শুভ ফিড প্রসেসিং’ নামের একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের মালিক। এছাড়া স্মারকলিপিতে চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরকে বিএনপির প্রধান অর্থ যোগানদাতা হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।