নিজস্ব প্রতিবেদক,
কক্সবাজারের টেকনাফে আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার নির্ধারিত দ্বিতীয় ধাপের চার দিনের সাক্ষ্যগ্রহণের প্রথম দিন শেষ হয়েছে। তবে এ সাক্ষ্য গ্রহণ নিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের গণমাধ্যমে কথা বলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
রোববার (০৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিনে মোহাম্মদ আলী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাকে জেরাও করেছেন ১৫ আসামির আইনজীবী। তবে আজকে আদালত উভয় পক্ষকে এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করার বিষয়টি আদালতের নজরে এনেছি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে কোনো ধরনের মিডিয়ায় বক্তব্য না দিতে সংশ্লিষ্ট সকল আইনজীবীদের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রথমদিনে মোহাম্মদ আলী নামে একজন জবানবন্দি দিয়েছেন। তারপরই তাকে জেরা করেন ১৫ আসামির আইনজীবীরা।
নির্ধারিত তিনদিনের পর সাক্ষ্যগ্রহণ মূলতবি করে ৫, ৬, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় ধাপের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন। যথা নিয়মে এ মামলার ১৫ আসামিকে আজ আদালতে হাজির করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ আটক করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করা হয়। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।
আসামিদের মধ্যে পুলিশের ৯ জন সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুরুল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
গ্রেফতার হওয়া আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল।
বিএসডি/আইপি