২৪ ঘণ্টা পার হলেও সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ২৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টের আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি। তিন মাসের মধ্যে সুন্দরবনে ফের লাগা এই আগুন বিচ্ছিন্নভাবে বনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানী টহল ফাঁড়ির দুই একর এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে দাসের ভারানী টহল ফাঁড়ির অন্তর্গত বনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে বন বিভাগ ও স্থানীয় কয়েক শ মানুষ। তাঁরা ফায়ার লাইন (আগুন লাগা অংশের সঙ্গে অন্য অংশের মাটি কেটে আলাদা করে ছোট নালা তৈরি) কাটার কাজ শুরু করেন। দুপুরের পরপর যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস। তবে এলাকাটি দুর্গম হওয়াতে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত সেখানে পানি পৌঁছাতে পারেননি তাঁরা।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট, বন বিভাগের আশপাশের ৭টি ফাঁড়ি, স্টেশনের কর্মীসহ সিপিজি (বন সুরক্ষা কমিটি) ও স্থানীয় লোকজন আগুন নেভাতে কাজ শুরু করেন। সকাল সোয়া ১০টা থেকে ফায়ার সার্ভিস তাদের ব্যবহৃত প্রায় ৫০টি পাইপ যুক্ত করে প্রায় ৩ মাইল দূরে মরা ভোলা নদী থেকে পাম্প করে পানি ছেটানো শুরু করেছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন সকালে ঘটনাস্থল থেকে বলেন, আগুন লাগা এলাকার চারপাশজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসও পানি দিতে শুরু করেছে। বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর পাশাপাশি সিপিজি সদস্য ও স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। পাশাপাশি কিছু শ্রমিকও নিয়োগ করা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ এলাকাজুড়ে ফায়ার লাইন কাটা হয়েছে বা কতটুকু বনভূমির মধ্যে এখন আগুন আছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি তিনি। তবে তিনি দাবি করেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আছে। কিছু কিছু এলাকাতে ধোঁয়া রয়েছে। যেখানে পানি ছিটানো হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, তাঁরা সকাল থেকে কাজ শুরু করেছেন। এলাকাটি দুর্গম এবং পানির উৎস দূরে হওয়াতে কাজ করা একটু কঠিন হচ্ছে। আজ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এদিকে সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে গতকাল সন্ধ্যায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বন বিভাগ। শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম ও শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে (ডিএফও) প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। জানা গেছে, আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের আসার পর কমিটি কাজ শুরু করবে।
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামে মরা ভোলা নদী পার হলেই সুন্দরবন। নদী তীর থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দাসের ভারানী টহল ফাঁড়ি। ওই টহল ফাড়ি থেকেও বেশ দূরে ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুন নেভাতে দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের শতাধিক গ্রামবাসী যোগ দেন।
কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন, এখানে কাছাকাছি কোনো পানির উৎস নেই। এ কারণে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায় দুই একর এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে আগুন ছড়িয়ে গেছে। শুকনো পাতার মাঝ থেকে এক এক স্থানে হঠাৎ করে ধোঁয়া ও আগুন দেখা যাচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, আজ বেলা পৌনে ১১টা থেকে বৃষ্টি হচ্ছে এই এলাকায়।
এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় আগুন লেগে প্রায় চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়।