ডেস্ক রিপোর্ট
স্ট্রোক বর্তমান বিশ্বে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম সাধারণ কারণগুলোর একটি। মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে রক্ত ক্ষরনের ফলে অক্সিজেন সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটলে মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অবস্থাকে বলা হয় স্ট্রোক। বিশ্বে প্রতি দুই সেকেন্ডে কেউ না কেউ স্ট্রোক করছে। পৃথিবীর প্রতি ছয়জন মানুষের মধ্যে একজন তার জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে এসে স্ট্রোক করেন। মৃত্যুর পাশাপাশি এটা মানুষকে বিকলাঙ্গ ও কাজে অক্ষম করে দেয়।
স্ট্রোকের লক্ষণ ও F.A.S.T টার্ম:
বেশকিছু লক্ষণ দেখা দিলে বোঝা যাবে একজন ব্যক্তি স্ট্রোক করতে যাচ্ছেন, এক্ষেত্রে আমরা F.A.S.T টার্মটি ব্যবহার করতে পারি।
ক. ফেসিয়াল ড্রুপিং: ব্যক্তিতে হাসতে বললে ব্যক্তির মুখের পেশিগুলো দুর্বল থাকায় হাসি ঠিকমতো প্রকাশ পাবেনা, মুখের একপাশ বেঁকে যেতে পারে।
খ. আর্ম উইকনেস বা বাহু দুর্বলতা: ব্যক্তিকে হাত উপরে তুলতে বললে, সে যদি অক্ষম হয় তবে তা পেশির দুর্বলতা প্রকাশ করবে।
গ. স্পিচ বা উক্তি : কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে, কথা বলতে গিয়ে যদি শব্দগুলো জড়িয়ে যায়।
ঘ. সময়: উপরের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেলে যতো দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
যাদের স্ট্রোক হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে:
ক. হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী।
খ. ধূমপায়ী।
গ. বহুমূত্র বা ডায়াবেটিক রোগী।
ঘ. যাদের হাই কোলেস্টেরল রয়েছে।
স্ট্রোকের চিকিৎসা:
প্রথমত, ক্লটটি সরানোর জন্য একটা ইন্ট্রাভেনাস মেডিকেশন দেয়া হয়, যেটা হলো টিস্যু প্লাজমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর (TPA)। এটা ক্লটকে ভেঙে ফেলে এবং রক্ত চলাচলকে স্বাভাবিক করে দেয়। এটা যদি স্ট্রোকের কয়েক ঘন্টার মাধ্যে দেওয়া যায়, তখন আক্রান্ত ব্যক্তি ক্ষতির মুখ থেকে অনেকাংশেই বেঁচে যায়।
যদি টিস্যু প্লাজমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর না দেয়া যায়; যেমন রোগী কিছু ওষুধ আগে থেকে নেবার কারণে কিংবা রোগীর আগে কোন অত্যধিক রক্তপাতের হিস্ট্রি থাকলে, কিংবা ক্লটটা যদি অনেক বড় হয়ে থাকে সে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকরা এন্ডোভাসকুলার থ্রোম্বেক্টমি করে থাকেন।
এক্ষেত্রে, একটা রং ব্যবহার করা হয়, যেটা রক্তে প্রবেশ করে মস্তিষ্কের কোন জায়গায় ব্লক আছে সেটা এক্সরে তে তুলে ধরতে সাহায্য করে। ডাক্তার একটা চিকন ফ্লেক্সিবল টিউব যেটার নাম ক্যাথেটার তা পায়ের রক্তনালির ভেতর দিয়ে প্রবেশ করান। সেটা পুরো রক্তনালি হয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে, যেখানে ব্লকটা আছে ঠিক সে জায়গায়। সেই ক্যাথেটার এর ভেতরে একটা রিট্রেভার প্রবেশ করিয়ে পাম্পিং করে ক্লটটাকে টেনে বের করে আনা হয়। এতে রক্তপ্রবাহ পুনরায় স্বাভাবিক হয়ে আসে। এই পদ্ধতিটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব করতে হয়, যাতে মস্তিষ্কের ক্ষতি এড়ানো যায়।
স্ট্রোক থেকে সুস্থতা লাভ:
ব্যক্তি বিশেষে ধীরে ধীরে স্ট্রোক সেরে উঠতে পারে। অনেকের মস্তিষ্কের কিছু অংশে ক্ষতি হয়ে যায়। অনেকেই ভালো হয়ে ওঠে অনেকটাই। কিছু থেরাপি যেমন-
স্পিচ থেরাপি, ফিজিক্যাল থেরাপি, ওকোপেশন থেরাপি ইত্যাদি কারো কারো ক্ষেত্রে কাজে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে স্ট্রোকের রোগীদের মধ্যে বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। যেটা কাটিয়ে উঠবার জন্য আত্বীয়-স্বজন ও কাছের মানুষদের স্ট্রোক করা ব্যক্তিকে মানসিক ভাবে মনোবল দিতে হবে ।
বিএসডি/এমএম