নিজস্ব প্রতিবেদক,
স্বাস্থ্যখাত নতুন ভাবে ঢেলে সাজানোর দাবিতে ঢাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বৃহস্পতিবার বিকালে এ মানববন্ধন থেকে সংকটে স্বল্পমূল্যে অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য বুয়েটের একদল শিক্ষক-ছাত্রদের উদ্ভাবিত “অক্সিজেট” ডিভাইস কে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কর্তৃক দ্রুত অনুমতি প্রদান এবং সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ স্বাস্থ্যখাত নতুন ভাবে ঢেলে সাজানোর দাবি জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠন সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, “বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কোন দুর্নীতিবাজের ঠাঁই হবে না। করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে ততই বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। এরই মধ্যে চাপ কম থাকায় খুলনায় এবং হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকটে বগুড়ায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আশার আলো দেখাচ্ছে বুয়েটের তৈরি অক্সিজেট। যন্ত্রটি মূলত স্বল্প খরচে রোগীকে উচ্চ গতির অক্সিজেন দিতে সক্ষম। যন্ত্রটি বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণে মিনিটে ৬০ লিটার গতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। প্রয়োজনে দিবে শতভাগ অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন। এরই মধ্যে যন্ত্রটিকে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সঙ্গে তুলনা করেছেন চিকিৎসকরা। বুয়েটের গবেষক দল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করার পরেও আজও পর্যন্ত অনুমতি দেয়া হয়নি। করোনা সংকট মোকাবিলায় অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, যন্ত্রটি নিয়ে এতদিন গণমাধ্যমে আলোচনা হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমতি দেয়া হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এবিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অক্সিজেট উদ্ভাবকদের বক্তব্য অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেলে অক্সিজেটের পরীক্ষামূলক ব্যবহারে ভালো ফলাফল মিলেছে। তাঁরা অনুমোদন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। করোনা সংকটে আইসিইউ যারা পাচ্ছেন না, হাইফ্লো ন্যাজাল যখন সহজলভ্য না, ঠিক সেই সময়ে ব্যাকআপ হিসেবে অস্থায়ীভাবে একটা ব্রিজিং থ্যারাপি হিসেবে এটা ব্যবহার করা সম্ভব। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের জনস্বার্থ বিরোধী কোন ষড়যন্ত্র মেনে নিবে না বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অবিলম্বে বুয়েট উদ্ভাবিত অক্সিজেট কে দ্রুত অনুমোদন দিতে হবে। অন্যথায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।
মো: আল মামুন বলেন, শুধুমাত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা সংকট মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যখাতকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্য বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। রাজধানীর বাহিরে জেলা হাসপাতালগুলোর অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিউ বেড স্থাপন, অক্সিজেন ব্যবস্থা, করোনা টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ সকল নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের সাথে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মায়ের নামে তৈরি শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের বাতি কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যেখানে ১৫ ওয়াট বাথরুম লাইট কেনা হয়েছে ৩৮৪৩ টাকায়। ১৮ ওয়াটের সারফেস ডাউন লাইট কেনা হয়েছে ৩৭৫১ টাকায়। এমন ২৪ ধরনের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। নির্মাণাধীন সরকারি হাসপাতালে এমন দরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম সরবরাহ করছে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ভাগ্নের প্রতিষ্ঠান, ‘কসমো লাইটিং’। পিডাব্লিউডির তালিকাভুক্ত না হলেও এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, মাস্ক কেলেঙ্কারি, কোভিড টেস্ট নিয়ে জালিয়াতি, জেকেজি আর রিজেন্ট হাসপাতালের মতো বড় আর আলোচিত ঘটনার পরেও, স্বাস্থ্য খাতে ১৮০০ জনবল নিয়োগে কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব, শত শত কোটি টাকার কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর আবার দেশের গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়েছে। যে সাংবাদিক এই প্রতিবেদনগুলো করেছিলেন, সেই রোজিনা ইসলামকে অন্যায়ভাবে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর অফিসিয়াল সিক্রেক্টস অ্যাক্টের একটি মামলা করে কারাগারে পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনা সংকটে স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, কেনাকাটায় দুর্নীতি আর অনিয়মের অনেক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যেসব খবরের কোন প্রতিবাদও আসেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে। করোনা মহামারির সময়ে এই খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে বলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। ২০১৯ সালে একটি প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি মিলিয়ে দুর্নীতি বেশি হয়, এমন ১১টি খাত চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। সংগঠনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে দশ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থ ব্যয়কালীন দুর্নীতি
বিএসডি / মাজিদ