ধর্ম ডেস্ক:
হজরত জিবরাইল (আ.) ছিলেন রসুলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ওহিবাহক ফেরেশতা। তাঁরই মাধ্যমে সমগ্র কোরআন মহানবী (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়। কোরআনে কারিম অবতরণ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে আগমন করতেন। সাহাবি হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন আমরা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম।
এমন সময় সাদা ধবধবে কাপড় ও মিশমিশে কালো কেশধারী একজন লোক আমাদের কাছে উপস্থিত হলেন। তাঁর মধ্যে (দূরবর্তী আগন্তুকের মতো) ভ্রমণের কোনো চিহ্নও দেখা যাচ্ছিল না। অথচ আমাদের মধ্যে কেউ তাঁকে চিনতেও পারল না। তিনি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বসলেন এবং তাঁর দুই জানুর সঙ্গে নিজের দুই জানু মিশিয়ে, দুই হাত তাঁর দুই ঊরুর ওপর রেখে বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে বলুন ইসলাম সম্পর্কে। রসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বললেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর রসুল এ সাক্ষ্য দেবে, জাকাত দেবে, রমজানে রোজা রাখবে এবং সক্ষম হলে বায়তুল্লাহর হজ করবে, এটাই হলো ইসলাম। তিনি বলেন, ঠিক বলেছেন। আমরা আশ্চর্য বোধ করলাম। (অজ্ঞ লোকের মতো) প্রশ্ন করছেন আবার (বিজ্ঞের মতো) তাঁর সমর্থনও করছেন। এরপর তিনি বললেন, আমাকে বলুন ইমান কাকে বলে? রসুলুল্লাহ (সা.) উত্তরে বললেন, আল্লাহতায়ালা সম্পর্কে বিশ্বাস করবে এবং তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রসুলগণ ও পরকালের ওপর এবং ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর বিশ্বাস করবে। আগন্তুক বললেন, হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেন, ইহসান কী? রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আপনি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন যেন আপনি তাঁকে দেখতে পান। আর যদি তাঁকে দেখতে না পান তবে মনে করবেন তিনি আপনাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে বলুন কিয়ামত সম্পর্কে। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, এ বিষয়ে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি প্রশ্নকারী অপেক্ষা বেশি জ্ঞাত নন। আগন্তুক বললেন, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন বলুন। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, দাসী তার প্রভুকে জন্ম দেবে এবং (এককালের) উলঙ্গ পা, উলঙ্গ শরীর ও রাখালরা অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা করবে। এরপর লোকটা চলে গেলেন এবং আমি তথায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। রসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, ওমর চিনলে প্রশ্নকারী লোকটিকে? আমি বললাম আল্লাহ ও তাঁর রসুল ভালো জানেন। রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তিনি জিবরাইল। তিনি তোমাদের তোমাদের দীন শেখাতে এসেছিলেন।’ মুসলিম, বুখারি।
এ হাদিসে প্রশ্নকারী ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) ছিলেন বলে হাদিসটি ‘হাদিসে জিবরাইল’ হিসেবে প্রসিদ্ধ। এ হাদিসটিতে ইসলাম ধর্মের মৌলিক বিষয় ইসলাম, ইমান, তাকদির ও পরকালের প্রতি আকিদা বিশ্বাস, ইহসান ও কিয়ামতের নিদর্শন সম্পর্কিত বর্ণনা রয়েছে, তাই এ হাদিসটিকে ‘উম্মুস সুন্নাহ’ (হাদিসের মূল) বলা হয়। যেভাবে সুরা ফাতিহাকে ‘উম্মুল কোরআন’ বলা হয়। উল্লিখিত হাদিসে সাতটি বিষয়ে ইমান গ্রহণের প্রতি নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- আল্লাহর ওপর ইমান গ্রহণ করা এবং ফেরেশতা, আল্লাহর কিতাব, তাঁর রসুল, ভালো-মন্দ তাকদির, পরকাল ও পুনরুত্থানের ওপর ইমান গ্রহণ করা। এ সাতটি বিষয় ইমানে মুফাসসাল (ইমানের বিস্তারিত বিবরণ) হিসেবে প্রসিদ্ধ। মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই এ বিষয়গুলো অতি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করা জরুরি। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।
লেখক : গবেষক, মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা, ঢাকা।
বিএসডি /আইপি