আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুথি গোষ্ঠীর চালানো যে কোনও হামলার জন্য তিনি তেহরানকে দায়ী করবেন। সোমবার (১৭ মার্চ) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি এর জন্য ইরানকে পরিণতি ভোগ করার হুঁশিয়ারিও দেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, এই মুহূর্ত থেকে হুথিদের ছোড়া প্রতিটি গুলি ইরানের অস্ত্র ও নেতৃত্ব থেকে ছোড়া গুলি হিসেবে বিবেচিত হবে, এবং ইরানকে দায়ী করা হবে, এবং পরিণতি ভোগ করতে হবে, যা হবে ভয়ঙ্কর!
ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ফেরার পর প্রথমবার মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ করেছে তার প্রশাসন।
আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের বিরুদ্ধে হুথিদের হামলার হুমকির জবাবে, শনিবার ইয়েমেনে নতুন একদফা বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার হুথি-নিয়ন্ত্রিত আল মাসিরাহ টিভি জানিয়েছে, লোহিত সাগরের বন্দর নগরী হোদেইদা এবং রাজধানী সানার উত্তরে আল জাওফ গভর্নরেটকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
তবে হোয়াইট হাউজ বলেছে, ট্রাম্পের বার্তা হলো, ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব সহকারে নেয়।
পেন্টাগন বলেছে, তারা এখন পর্যন্ত ৩০টিরও বেশি স্থানে হামলা চালিয়েছে। হুথিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক শক্তি প্রয়োগ করবে মার্কিন বাহিনী যতক্ষণ না তারা হামলা বন্ধ করে। পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র শন পারনেল বলেছেন, এই অভিযানের উদ্দেশ্য শাসন পরিবর্তন নয়।
এদিকে হুথি নেতা আবদুল মালিক আল-হুথি রবিবার বলেছেন, যতক্ষণ যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে হামলা চালিয়ে যাবে, ততক্ষণ তারা লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজগুলোকে টার্গেট করবে।
যৌথ বাহিনীর পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল অ্যালেক্স গ্রিনকেভিচ বলেছেন, হুথিদের বিরুদ্ধে চলমান এই অভিযান সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়কার অভিযানের চেয়ে আলাদা। কারণ এবার টার্গেটের পরিধি বিস্তৃত করা হয়েছে এবং সিনিয়র হুথি ড্রোন বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গ্রিনকেভিচ বলেন, এই হামলায় হুথিদের বহু সদস্য নিহত হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন সিনিয়র হুথি নেতাদের টার্গেট করেনি বলে জানা যায়।
হুথি-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার জানিয়েছে, এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৩ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন শিশু ও দুইজন নারী রয়েছে এবং ৯৮ জন আহত হয়েছে। রয়টার্স স্বাধীনভাবে এই হতাহতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি।
হুথিরা প্রায় এক দশকের সৌদি-নেতৃত্বাধীন বিমান হামলার পরেও ইয়েমেনের সবচেয়ে জনবহুল অংশগুলোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে উপকূলের কাছে জাহাজগুলোর ওপর একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, যা বৈশ্বিক বাণিজ্য বিঘ্নিত করছে।
হুথিরা বলেছে, তাদের হামলাগুলো মূলত গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদ ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশের জন্য।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা এসব হামলাকে অনিয়ন্ত্রিত এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে।
সৌদি আরব ও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, হুথিদের ব্যবহৃত অস্ত্র ইরান সরবরাহ করছে। তবে তেহরান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যদিও ইরান হুথিদের সমর্থন করে। হুথিরা নিজেদের তেহরানের ক্রীড়নক হিসেবে স্বীকার করতে রাজি নয়। ইয়েমেন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুথিদের মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই তাদের চালিত করছে।