জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ:
বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ফসলি জমির পরিমাণ কমছে। ফলে এর প্রভাব পড়ছে খাদ্য উৎপাদনে। খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে অতিরিক্ত কীটনাশক। এতে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে ফসলি মাটির স্বাস্থ্য। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণ পেতে কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি ও জৈব সারের ব্যবহার বাড়ানো দরকার।
উপজেলা ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকা বা ইউনিয়ন সহায়িকা ব্যবহার করে বরেন্দ্র অঞ্চলের অম্লীয় মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সম্মেলন কক্ষে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের এএসএমএসসিপি শীর্ষক কর্মসূচির অর্থায়নে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।
তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের গবেষণা অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কমলারঞ্জন দাশ বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো মাটিতে শুধুমাত্র বীজ ফেলে দিলেই ফসল হয়। কিন্তু অনেক দেশেই এমন অনুকূল পরিবেশ নেই। তাই তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই জমি চাষাবাদ করে থাকে। অথচ আমরা এমন মাটি পেয়েও এর সঠিক ব্যবহার করি না। যেমন- একটি খেজুর গাছে কেউ কোনোদিন সার বা পরিচর্যা করা তো দূরের কথা, পানি পর্যন্ত দেয় না। অথচ প্রত্যেক বছর শীতে বিপুল পরিমাণ খেজুর রস আহরণ করে থাকি। ঠিক তেমনই এমন মাটি পেয়েও আমরা সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে আগে পানির অভাবে ফসল ফলানো যেত না। কিন্তু সরকারের নানাবিধ পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে পরিস্থিতি বদলে গেছে। এর প্রভাবে এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের জমির দাম বেড়েছে। কারণ এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে বিভিন্ন ফলের চাষাবাদ করা যায়। তবে এসব জমিতে অধিক হারে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি ছাড়াও শস্য নির্বাচনেও গুরুত্ব দিতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিতে কম পানিতে হয়ে যায় এমন ফসল চাষাবাদ করতে হবে। এক্ষেত্রে তুলা চাষের পরামর্শ দেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ফিল্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, দেশের ফসলি মাটির স্বাস্থ্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে রয়েছে। মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে মাটিতে অধিক হারে জৈব সারের ব্যবহার করতে হবে। দেশের সব মাটির পিএইচ কম। কিন্তু বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি খারীয়। এই মাটিতে বেশি করে চুনের ব্যবহার করতে হবে। এতে ফসল উৎপাদন বাড়বে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. জমির উদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মো. রোকন-উজ্জামান।