নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সরকারী গুদামের ধারণক্ষমতা ৩৭ লাখ টনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আরও ১৯৬টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্পের আওতায় ১৯৬ খাদ্যগুদাম নির্মাণের পাশাপাশি ৭২৫টি সিসি ক্যামেরা, গুদামে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য ডানেজ (চালের বস্তা রাখার কাঠের ফ্রেম) সংগ্রহ, ৫০টি ময়েশ্চার স্ট্যাবিলাইজার স্থাপন করা হবে। এছাড়া ১০টি যানবাহনও সংগ্রহ করা হবে। বর্তমানে সরকারী গুদামে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ২১ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের ৫৩টি জেলার ১২৮টি উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নির্মিত হবে এসব গুদাম। এই গুদামগুলো নির্মাণের মাধ্যমে ২০২৫ সালের মধ্যে খাদ্য সংরক্ষণ সক্ষমতার লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাবে সরকার। এজন্য নেয়া হয়েছে দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে নতুন খাদ্যগুদাম ও আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ প্রকল্প। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে খাদ্য অধিদফতর। প্রকল্পের মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ৭৯২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের খাদ্যমজুদ বাড়ানো এবং কৃষকরা যাতে ন্যায্যমূল্য পান সে কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারী গুদামে ধারণক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। তিনি বলেন, নির্মাণাধীন সাইলো হবে অত্যাধুনিক। এতে কৃষক ভেজা ধান নিয়ে এলেও তা রাখার সুযোগ থাকছে। ভেজা ধান রাখলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা শুকিয়ে যাবে। ভেজার অভিযোগে আর কোন কৃষকের ধান ফেরত নিয়ে যেতে হবে না। মন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বরিশাল, খুলনা, নারায়ণগঞ্জ ও নওগাঁয় চারটি চালের সাইলো নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া মধুপুর, আশুগঞ্জ ও ময়মনসিংহে চাল ও গমের সাইলো নির্মাণাধীন রয়েছে। এ সব সাইলো সক্রিয় হলে সরকারের গুদামে ধারণক্ষমতা ৩০ লাখে উন্নীত হবে। তিনি বলেন, আমাদের টার্গেট ধারণক্ষমতা ৩৭ লাখে উন্নীত করা। সে লক্ষ্যে আরও সাইলো নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি হলেও তা এখন প্রায় ২০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বিপুলসংখ্যক এই জনগোষ্ঠীকে নিয়েই উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। এ জনগোষ্ঠীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ ও পুষ্টি নিশ্চিতে কাজ করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে খাদ্যশস্য ধান, চাল ও গম সংগ্রহ করে সংরক্ষণ এবং পরে প্রয়োজনীয় সময়ে বিতরণ করা হচ্ছে। খাদ্য মজুদ ও সংরক্ষণ বাড়াতেই গুদাম নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ফলে খাদ্য চাহিদা সামলানো যাবে। সারাদেশে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে। গুদাম বাড়লে কৃষকরা ধান সরাসরি এখানে বিক্রি করতে পারবেন।
বর্তমানে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য অধিদফতরের অধীন ছয়টি সাইলো, ১২টি সিএসডি (কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম), ৬৩৫টি এলএসডিতে (আঞ্চলিক খাদ্যগুদাম) খাদ্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এই গুদামসমূহে খাদ্যশস্যের মোট ধারণক্ষমতা ২১ দশমিক ৮০ লাখ মেট্রিক টন। ভবিষ্যতের প্রয়োজন চিন্তা করে সরকার এই ধারণক্ষমতা ৩৭ লাখে উন্নীত করতে কাজ করছে। সেজন্য আরও ১৯৬টি খাদ্যগুদাম নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় ১৯৬ খাদ্যগুদাম নির্মাণের পাশাপাশি ৭২৫টি সিসি ক্যামেরা, গুদামে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের জন্য ডানেজ সংগ্রহ, ৫০টি ময়েশ্চার স্ট্যাবিলাইজার স্থাপন করা হবে। এছাড়া ১০টি যানবাহনও সংগ্রহ করা হবে।
উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা ধরনে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। ওই সময় মজুদ করা খাবারের দরকার পড়ে সবচেয়ে বেশি। খাদ্য ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারলে এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্যশস্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, নতুন গুদাম নির্মাণের মাধ্যমে সংরক্ষণ ক্ষমতা ৩৭ লাখে উন্নীতকরণ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন চ্যানেলে (ওএমএস, ভিজিডি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী) জনগণের কাছে খাদ্যশস্য যথাসময়ে পৌঁছানো এবং সর্বোপরী টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণের ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সম্প্রসারণ, কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য করা সম্ভব হবে। খাদ্যশস্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা আরও সহজ থেকে সহজতর হবে। এছাড়া বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প ও জলোচ্ছ্বাসের সময় দেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী জনগণের জন্য খাদ্যসহায়তা দেয়া দ্রুত ও সহজতর হবে।
কর্মকর্তারা আশা করছেন, নতুন গুদাম নির্মাণ হলে একদিকে যেমন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের ধারণক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হবে, তেমনি প্রয়োজনে গুদাম ভাড়া দিয়ে সরকারের রাজস্বও বাড়ানো যাবে। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের পরিচালক (পরিদর্শন, উন্নয়ন ও কারিগরি সেবা বিভাগ) এফ এম মিজানুর রহমান বলেন, খাদ্য মজুদ ও সংরক্ষণ বাড়াতেই গুদাম নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। ফলে খাদ্য চাহিদা সামলানো যাবে। সারাদেশে খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়বে। গুদাম বাড়লে কৃষকরা ধান সরাসরি এখানে বিক্রি করতে পারবেন। সরকারের পাশাপাশি এতে কৃষকরাও লাভবান হবেন।
গুদাম নির্মাণের বিষয়ে সাবেক খাদ্য সচিব কায়কোবাদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, খাদ্য সংরক্ষণ বাড়াতেই হবে। সংরক্ষণ সক্ষমতা না বাড়লে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বাড়ছে, ফলে আমাদের চাহিদা বাড়ছে। বেশি পরিমাণে খাদ্যনিরাপত্তার জন্য খাদ্যগুদাম জরুরী। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়সহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। ওই সময়ে মজুদ করা খাবারের দরকার পড়ে সবচেয়ে বেশি। খাদ্য ধারণক্ষমতা বাড়াতে পারলে এ ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী (এফএফপি) নিয়েছিল, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর (এফএফপি) মাধ্যমে ৫০ লাখ গরিব পরিবারকে প্রতি মাসে ১০ টাকা মূল্যে ৩০ কেজি চাল (পাঁচ মাস) দেয়া হয়েছে। ফলে দুই কোটি মানুষের (প্রতি পরিবারে চার সদস্য হিসাবে) ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে।
গরিব মানুষের ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন কর্মসূচীর আবারও প্রয়োজন হতে পারে উল্লেখ করে সাবেক খাদ্য সচিব বলেন, এমন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হলে খাদ্য সংরক্ষণ সক্ষমতা বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে নতুন খাদ্যগুদাম নির্মাণ নিঃসন্দেহ সরকারের ভাল পদক্ষেপ।
বিএসডি/ এফএস