নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান ড. ফেরদৌসী কাদরী।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে তার র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার-২০২১ প্রাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. ফেরদৌসী কাদরী বলেন, দেশে এখন করোনা সংক্রমণ কমে এসেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এ সংক্রমণ বেড়ে গিয়ে আবারও কমছে। কমার পেছনে অন্যতম কারণ হলো অ্যান্টিবডি। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে আমাদের দেশেই ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, সংক্রমণ থেকে মুক্ত হতে আমাদের আরও সচেষ্ট হতে হবে। নিয়মিত হাত ধুতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া টিকা কার্যক্রমকে গতিশীল করার পাশাপাশি আরও ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ আগস্ট র্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ট্রাস্টি ২০২১ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন। বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী ছাড়াও এ বছর পাকিস্তানে দারিদ্র বিমোচনে ভূমিকা রাখায় দেশটির অন্যতম বৃহৎ এক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোহাম্মদ আমজাদ সাকিব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাস্তুচ্যুত শরণার্থীদের জীবন পুনর্গঠনে কাজ করা স্টিভেন মুনচি-ও এ পুরস্কার পেয়েছেন।
র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার এশিয়ার সর্বোচ্চ সম্মাননা এবং এ অঞ্চলে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ড. ফিরদৌসী কাদরীর বিষয়ে ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন বলছে, কাদরী একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী; যিনি লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচাতে কলেরা টিকা আবিষ্কারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন।
বিজ্ঞানী ফিরদৌসী কাদরী কর্মজীবনের একেবারে শুরুর দিকে মেডিকেল গবেষণার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮৮ সালে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) যোগদান করেন তিনি। বর্তমানে আইসিডিডিআর,বির ইমিউনোলোজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
কর্মজীবনের শুরু থেকেই ডা. কাদরী সংক্রামক ব্যাধি, ইমিউনোলজি, ভ্যাকসিন উদ্ভাবন এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ওপর মনোনিবেশ করেন।
বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন, শিক্ষা এবং দুর্বল চিকিৎসাসেবার এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করা কলেরা এবং টাইফয়েডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন ৭০ বছর বয়সী কাদরী। একেবারে স্বল্প দামের মুখে খাওয়ার কলেরা ভ্যাকসিন (ওসিভি) এবং টাইফয়েডের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের তত্ত্বাবধানে তিনি গণ ওসিভি টিকাদান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ শরণার্থী শিবিরে গণটিকাদানের কারণে কলেরার প্রাদুর্ভাব ঠেকানো সম্ভব হয় বলে ওয়েবসাইটে লিখেছে র্যামম ম্যাগসেসে কমিটি।
র্যামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ট্রাস্টি পুরস্কার ঘোষণার সময় বলেছেন, লাখ লাখ মানুষের উপকারে টিকার উন্নয়নে নিবেদিত ভূমিকার জন্য ডা. ফিরদৌসী কাদরীকে এ পুরস্কারে ভূষিত করা হলো।