গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ছোট ছোট সব দলকে মিলে এক হতে হবে। তাহলে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
শনিবার (২৯ মে) দুপুরে ধানমন্ডিতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেজর হায়দার মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
অ্যাড. আবদুস সালামের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘গণতন্ত্র ও গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা কোন পথে’ শীর্ষক এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওর্য়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক আহমেদ এবং গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল।
অনুষ্ঠানে আবদুস সালামের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ ও সভা পরিচালনা করেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহানাইন বাবু। সভায় আবদুস সালামের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম রাজনীতির জন্য বা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে জীবন দিয়েছেন। এরকম জীবন দেওয়ার জন্য ১০০ কর্মী এগিয়ে আসলে আজকের অবস্থার পরিবর্তন হবে। এই নেতা-কর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে একটি তহবিল গঠন করতে হবে যেখান থেকে হামলা-মামলা, চিকিৎসা ও পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মায়ের মৃত্যুতে মন্ত্রণালয়ের তহবিল ব্যবহার করে সব জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেওয়া একটি দুর্নীতি। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা দরকার।
সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতন্ত্র কেবল একটি পদ্ধতিগত ব্যপার নয়। এর মধ্যে জবাবদিহিতার গ্যারান্টি থাকতে হয়। তা না হলে এটা সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনে রূপান্তরিত হয়, যা কখনো ফ্যাসিবাদী শাসনও হয়ে উঠতে পারে। সালাম ভাইসহ আরও অনেকে গণতন্ত্রের জবাবদিহিতা নিয়ে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে গণতন্ত্রের লেবাসে ফ্যাসিবাদী শাসন জারি আছে। এখানে যারা ক্ষমতায় যায় তারা সবকিছু নিয়ে নেয়, আর বিরোধী পক্ষের অবস্থা এত খারাপ হয় যে, জীবন নিয়ে টিকে থাকাই কঠিন। এই গণতন্ত্রের লেবাসে ফ্যাসিবাদী শাসন শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না সারা দুনিয়াতে এরকম নজির খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গত ১০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে, এক হাজারের অধিক মানুষকে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে অত্যাচার করা হয়েছে এবং প্রায় ৬০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এর কোনো জবাবদিহিতা নাই। এই জবাবদিহিতাহীন ক্ষমতার উৎস লুকিয়ে আছে আমাদের শাসনতন্ত্রেই।
অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সালাম ভাই যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন তার জন্য মানুষের সামনে বিকল্প হাজির করতে হবে। আমরা কি লড়াই করছি মার্কা পরিবর্তনের জন্য? এই সরকার গেলে কারা আসবে? এই প্রসঙ্গ থেকে বের হয়ে এসে নতুন বিকল্প, নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর বিকল্প হাজির করতে হবে। মানুষ কি চায় এরকম দুই-একটি দাবি আসুন সবাই মিলে ঠিক করি; সেটা নিয়েই আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে মাঠে নামি।
সাইফুল হক বলেন, যারা জীবনের প্রতিটি ক্ষণ রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম এমনই একজন মানুষ ছিলেন।