আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট অতিসংক্রামক হলেও ভাইরাসের ডেল্টা ধরনের তুলনায় দুর্বল বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটি বলছে, ভাইরাসের আগের ধরনগুলোতে সংক্রমিত ব্যক্তি বা টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের সহজেই সংক্রমিত করতে পারে ওমিক্রন। তবে এই সংক্রমণের প্রভাব মৃদু।
করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই এই তথ্য সামনে আনলো বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শীর্ষ এই সংস্থাটি। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছেন ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস ।
বুধবার ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাওয়া তথ্যে আমরা এটিই দেখতে পারছি যে, করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে পুনঃসংক্রমণের হার অনেক বেশি। তবে এটিরও প্রমাণ রয়েছে যে, করোনার ডেল্টা ধরনের তুলনায় ওমিক্রন খুব বেশি গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে না।
অবশ্য তিনি জোর দিয়ে বলেন, ওমিক্রনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উপসংহারে পৌঁছানোর আগে আমাদের আরও তথ্য প্রয়োজন। নতুন ভ্যারিয়েন্ট হওয়ায় ওমিক্রনের চারিত্রিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য বাকি ভ্য়ারিয়েন্টগুলোর তুলনায় অনেকটাই আলাদা। আর তাই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে এমন দেশগুলোকে আরও বেশি করে তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক।
এছাড়া ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তরা গুরুতর অসুস্থ না হলেও এ বিষয়ে সতর্কতা ও নজরদারিতে সামান্য ঘাটতি দেখা দিলে সেটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন আধানম গেব্রেইয়েসুস। তার ভাষায়, ‘এই সময়ে যেকোনো ধরনের অসতর্কতার চড়া মূল্য দিতে হতে পারে। তাই অতি-সতর্ক থাকা প্রয়োজন।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরিবিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ানও গেব্রেইয়েসুসের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, দ্রুত এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট অধিক সংক্রামক বলে মনে করা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অধিক সংক্রামক হওয়ার অর্থ এই নয় যে, ভাইরাসকে আটকানো সম্ভব নয়। তবে এটি বলা যায়, মানবদেহে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম ভাইরাসের এই ধরন। এ কারণেই আমাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে, যাবতীয় বিধিনিষেধ অনুসরণ করে সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রতিরোধ করতে হবে।’
তার ভাষায়, ‘যদি আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় ওমিক্রন কম ভয়ঙ্কর হিসেবে প্রমাণিত হয়, তবুও ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। কারণ দ্রুতগতিতে এই সংক্রমণ ছড়ানোয় অধিক সংখ্যক মানুষ অসুস্থ হবেন। এর ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে এবং মানুষ ফের মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপরই তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একজন বিশেষজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনার বি.১.১.৫২৯ নামক এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এমনকি করোনার এই ধরন মানবদেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আক্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গ্রিক বর্ণমালার ১৫ নম্বর অক্ষর অনুযায়ী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘ওমিক্রন’ নাম দেয়।
সূত্র:আলজাজিরা
বিএসডি/ এলএল