করোনাভাইরাস মহামারিতে অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবগুলোর মতো এবার ম্লান হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবও। করোনার সংক্রমণ রোধে কোনো রকম আড়ম্বর ছাড়াই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজা। আয়োজকরা জানিয়েছেন, মহালয়া থেকে শুরু করে দশমী পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধির কঠোর কড়াকড়ি থাকবে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি বজায় রেখে পূজা উদযাপন করতে সারাদেশের আয়োজকদের কাছে ২৬ দফা নির্দেশনা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুব সীমিত আকারে মহালয়ার আয়োজন হবে। প্রতিমা তৈরি থেকে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি মন্দিরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মন্দির সামনে জীবাণুনাশক হ্যান্ডস্যানিটাইজার, সাবান ও হাত ধোয়ার পানি রাখতে হবে। মাস্ক ব্যবহার থাকবে বাধ্যতামূলক। ভক্ত বা দর্শনার্থীদের কমপক্ষে তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। পূজামণ্ডপে নারী ও পুরুষের প্রবেশে যাতায়াত আলাদা ব্যবস্থা করা, বেশি সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক রাখা। সন্দেহভাজন দর্শনার্থীদের দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা, আতশবাজি ও পটকা ফাটানো থেকে বিরত থাকা। এছাড়া প্রতিটি পূজামণ্ডপে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা রাখার কথা বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, ভক্তিমূলক সঙ্গীত ছাড়া অন্য কোনো মিউজিক বাজানো যাবে না। মাইক বা পিএ সেট ব্যবহার করা যাবে না, পূজামণ্ডপে প্রয়োজন ছাড়া দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সময় অবস্থান না করা এবং সন্ধ্যার পর পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিরুৎসাহিত করার বিষয়ও রয়েছে ওই নির্দেশনায়।
এছাড়া সম্ভব হলে ঘরে থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভক্তদের অঞ্জলি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে নির্দেশনায়। পূজামণ্ডপ এবং মন্দির কমিটিকে শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। গুজব ছড়ানোর চেষ্টা হলে বা ছড়ালে বিভ্রান্ত না হয়ে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলাবাহনীকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। এবার প্রতিমা বিসর্জন শোভাযাত্রায় রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি জানান, এবার শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরন করে পূজা অর্চনার আয়োজন করা হবে। কোনো রকম ভিড় হয় এমন আয়োজন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ধর্মীয় নিয়ম-নীতি অনুযায়ী যা যা করা হয়, তা হবে। আমরা ভক্ত-দর্শনার্থীদের মন্দিরে প্রবেশে নিরুৎসাহিত করছি। এতে তিনিও সুস্থ থাকবেন, অন্যরাও নিরাপদে থাকবেন। তারা প্রয়োজন মনে করলে গরীব অসহায়দের দান করবেন। ভার্চুয়াল অঞ্জলি দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। তারা ঘরে বসেই অঞ্জলি নিতে পারবেন।
পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার ১৭ সেপ্টেম্বর হবে শুভ মহালয়া। এবার পঞ্জিকা মতে আশ্বিন মাস শুভ নয় বলে মহালয়ার ৩৫ দিন পর দেবী দুর্গা আসবেন মর্ত্যে। সে অনুযায়ী ২২ অক্টোবর মহাষষ্ঠীতে হবে দেবীর বোধন। পরদিন সপ্তমীতে শুরু হবে মূল পূজা। ২৬ অক্টোবর মহাদশমীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
গত বছর সারাদেশে ৩১ হাজার একশ পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছিল। শুধুমাত্র ঢাকাতেই হয়েছিল ২৩৭ মণ্ডপে। এবার এই সংখ্যা থাকবে না বলে ধারণা পূজা উদযাপন কমিটির।
উল্লেখ্য, এবার করোনাভাইরাস মহামারিতে সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বাংলা নববর্ষ ও মুসলামানদের বৃহৎ দুই ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় উৎসবের আমেজ ছিল না। এমনকি এর আগে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীও সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।