নিজস্ব প্রতিবেদক
অপারেশন ডেভিল হান্ট আরও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমুখী করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি।
সোমবার (৩ মার্চ) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিবের অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গতকাল আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যে অপারেশন ডেভিল হান্টের নাম পরিবর্তন হচ্ছে- এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, কোর কমিটিতে আমরা এই ধরনের (নাম পরিবর্তন) কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। নিয়মিত এ মিটিংটা বসে কাজকর্মের অগ্রগতি দেখার জন্য। কোথায় আমাদের ফোকাস বাড়ানো দরকার, কোথায় ফোকাস বাড়ানোর দরকার নেই, কোথায় লোকবলের অপচয়, রোজার মাস আপনারা জানেন সবাই রোজা থাকে। এসময় জনবল সাশ্রয় করে আমরা সর্বোচ্চ কি কি কাজ করতে পারি, কোন কোন জায়গায় আমাদের যৌথ টহলের দরকার নেই— সেগুলো নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমরা কাজ করছিলাম। সেটা প্রতি মাসেই পরীক্ষা করা হয়, যে ফলাফল কি হচ্ছে। কোথাও নিষ্ফল পেট্রোলিং হচ্ছে কি না, এগুলো দরকার আছে কি না। ধারণা করে সাধারণত করা হয়, যখন দেখা যায় সমস্যা নেই, তখন আমরা সেখান থেকে সরে আসি। অন্য যেখানে প্রয়োজন হচ্ছে সেখানে করছি। এখন আমরা ঢাকা শহরের দিকে নজর দিচ্ছি। যে অপরাধ ঘটছে এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।
অভিযানকে সংকুচিত করছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, না তা নয়, এটাকে আমরা রেশনালাইজ করছি। কোন জায়গায় হয়ত এতগুলো লোক পাঠানোর দরকার নেই, সেগুলো দেখছি। কোথায় কয়টা পেট্রোল হচ্ছে সেটা আমরা দেখছি।
আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন কেমন দেখছেন, জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, আমি গতকাল ইফতার করেছি মোহাম্মদপুর থানায়। সেখানে গত ডিসেম্বর মাসে খুন হয়েছে দুটো। জানুয়ারি মাসে খুন হয়েছিল একটি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটিও খুন হয়নি। কিন্তু গতবছরের জুলাইয়ের আগে এখানে প্রতি মাসে দশটা করে খুন হতো।
দেশি-বিদেশে গণমাধ্যমে খুন-ধর্ষণের পরিসংখ্যান এসেছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিনিয়র সচিব বলেন, আমি কোনোটা অস্বীকার করছি না। আগে কি ছিল, এখন কি হচ্ছে, সেটা বলছি। আমরা একটা বিধ্বস্ত পুলিশ বাহিনী পেয়েছি। এই বাহিনীতে আমরা যাদের নিয়ে এসেছি, তারা কোনোদিন ঢাকা শহর দেখেনি। তারা এই জায়গাগুলো চিনে এখন কাজকর্ম করছে। ধীরে ধীরে তারা নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। প্রতিদিনই উন্নতি হচ্ছে। নতুন সমস্যা আসছে, আমরা নতুন কৌশল ব্যবহার করছি।
‘আগে কিশোর গংয়ের এইরকম ব্যাপার ছিল না। অল্প বয়সী ছেলেরা দৌড়াচ্ছে, আমার ভারী বুট পরা পুলিশ তার পেছনে দৌড়াতে পারে না। এজন্য কি ব্যবস্থা করা যায়, সেই বিকল্প ব্যবস্থা আমরা করছি।’
আপনারা কী আরও কঠোর হচ্ছেন, জবাবে সচিব বলেন, কঠোর হওয়ার কিছু নেই। কোমল হওয়ারও কিছু নেই। যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই করছি আমরা।
অপারেশন ডেভিল হান্ট কতদিন চলমান থাকবে, জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, এজন্যই আমরা প্রতি সপ্তাহে পর্যালোচনা করি। যে ফোর্সের দরকার নেই, সেটা রেখে তো আমার লাভ নেই। সবকিছুর একটা প্রসেস আছে। কোনো কিছুই তো আর সারা জীবন থাকে না।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নানা ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী অ্যাকশনে যাচ্ছে তারা।
এখনও মব চলছে, লালমাটিয়াতে দুজন মেয়েকে হেনস্তা করা হয়েছে- এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, মব অর্গানাইজডভাবে হয় না। কেউ একটা হুজুক তুলে দেয়। মেয়েগুলো ওখানে অর্গানাইজড ওয়েতে বসেনি বলে আমার ধারণা। লোকগুলো যে সংগঠিত হয়ে সেখানে এসেছে তাও না। এগুলো তো আগে থেকে অনুমান করা সম্ভব না।
‘আমাদের আরও একটু সময় লাগবে জাতিগতভাবে আরও একটি ওপরে যেতে। তখন এগুলো নিয়ে আর তখন এত ঝামেলা হবে না।’
মবের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, এতে অন্যরা উৎসাহিত হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্র সচিব বলেন, যেসব জায়গায় এ ঘটনাগুলো হচ্ছে সেখানে যদি তথ্যপ্রমাণ থাকে, যেসব জায়গায় এগুলো নিয়ে সিরিয়াস ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন হয়। সেগুলো সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অ্যাড্রেস করে।
নাসিমুল গনি আরও বলেন, আমরা ছুটির দিনগুলোতেও বসে থাকি না। আমরা প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা কাজ করি। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। আমরা আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখব না, এটুকু বলতে পারি, যাতে আগে যে অবস্থা ছিল তার থেকে আরও ভালো অবস্থায় যেতে পারি।