আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কাশ্মিরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের শুরুতে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে হামলা চালায় ভারত। আর ভারত তার এই হামলার নাম দেয় ‘অপারেশন সিঁদুর’।
আর এই ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে মন্তব্য করার জেরে ভারতে বিশ্ববিদ্যায়ের এক শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত ওই শিক্ষকের নাম আলী খান মাহমুদাবাদ। তিনি দেশটির আশোকা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক।
ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইয়ের বরাত দিয়ে রোববার (১৮ মে) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারতের আশোকা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদকে অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্যের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। রোববার উত্তরপ্রদেশ পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয়।
অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার অব পুলিশ অজিত সিং জানিয়েছেন, “অধ্যাপক মাহমুদাবাদকে দিল্লি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপারেশন সিঁদুর সংক্রান্ত একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।”
তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগটি দায়ের করেছিলেন বিজেপি যুব মোর্চার এক নেতা।
আশোকা ইউনিভার্সিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা জানতে পেরেছি, অধ্যাপক আলী খান মাহমুদাবাদকে আজ সকালে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিষয়টির বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছি। তদন্তে কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বিশ্ববিদ্যালয়।”
এর আগে গত ১২ মে হরিয়ানা রাজ্য নারী কমিশন অপারেশন সিঁদুর প্রসঙ্গে মাহমুদাবাদের মন্তব্য নিয়ে তাকে নোটিশ পাঠায়। সেই নোটিশে বলা হয়, ৭ মের দিকে আশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধানের করা এই মন্তব্য কমিশনের নজরে এসেছে।
কমিশনের চেয়ারপারসন রেনু ভাটিয়া বলেছিলেন, “দেশের কন্যাদের, যেমন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ভয়োমিকা সিংকে আমরা সম্মান জানাই। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়ানো একজন অধ্যাপক যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আশা করেছিলাম তিনি কমিশনের সামনে এসে দুঃখপ্রকাশ করবেন।”
কমিশনের নোটিশে সংযুক্ত মাহমুদাবাদের এক পোস্টে দেখা যায়, তিনি বলেন, কর্নেল কুরেশিকে প্রশংসা করা কট্টরপন্থিদের উচিত, একইসঙ্গে গণপিটুনির শিকারদের জন্যও তারা যেন ন্যায়বিচারের দাবি তোলে এবং নির্বিচারে বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনার বিরুদ্ধেও যেন তারা অবস্থান নেয়।
আরেকটি মন্তব্যে তিনি কর্নেল কুরেশি ও উইং কমান্ডার ভয়োমিকার সংবাদ সম্মেলনকে “অপটিক্স” বা “দৃশ্যমান প্রচার” বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “এই অপটিক্স বাস্তবতা না হলে, তা কেবলই ভণ্ডামি।”
কমিশনের দাবি, এই মন্তব্যগুলো নারী সেনা সদস্যদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে এবং তাদের পেশাগত ভূমিকাকে অবমূল্যায়ন করে।
সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদাবাদ এর আগে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে (সাবেক টুইটার) জানান, নারী কমিশন তার পোস্ট “ভুলভাবে ব্যাখ্যা” করেছে। তিনি লেখেন, “আমি অবাক হয়েছি, কীভাবে নারী কমিশন তাদের এখতিয়ার ছাড়িয়ে গিয়ে আমার পোস্টকে এমনভাবে ভুল ব্যাখ্যা করেছে যে, আসল অর্থ উল্টে গেছে।”
তিনি আরও বলেন, তিনি মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করে শান্তি ও সম্প্রীতির পক্ষে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর দৃঢ় পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি, যারা ঘৃণা ছড়ায় এবং ভারতের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়—তাদের সমালোচনা করেছেন।