আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তালেবানের হাতে কাবুল পতনের পর থেকেই মৃত্যুর প্রহর গুনছেন আফগানিস্তানের কনিষ্ঠতম ও প্রথম নারী মেয়র জারিফা। তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এখন কবে আমাকে খুন করবে তালেবান জঙ্গিরা, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছি! ২৭ বছর বয়সী এ নারী মেয়র আশরাফ ঘানি সরকারের কর্মী ছিলেন।
ঘানি দেশ ছেড়েছেন আগেই। কিন্তু অসহায় করুণ অবস্থার মধ্যে পড়েন সরকারি কর্মীরা। কেউ কেউ পালিয়েছেন। কিন্তু জারিফার মতো অনেকেরই সেই সৌভাগ্য হয়নি। তারাই এখন এক মহাবিপদের প্রমদ গুনছেন।
এক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জারিফা বলছিলেন ‘ঘানি সরকারের অনেক শীর্ষ স্তরের কর্মকর্তই পালিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন; কিন্তু আমার তো যাওয়ার জায়গা নেই। তাই এখানে বসেই অপেক্ষা করছি, তালেবান জঙ্গিরা কখন আসবেন, আমাকে খুন করবেন!’
জারিফা বলেন, ‘আমাদের সাহায্য করার কেউ নেই। পরিবারের সঙ্গে বসে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না। তালেবান জঙ্গিরা আমার মতো মানুষকে খুঁজতে খুঁজতে ঠিক এখানে হাজির হবে’।
২০১৮ সালে আফগানের ময়দান ওয়ার্ডাক প্রদেশের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন জারিফা। তিনি বলেন, ‘সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু মুহূর্তে যেন সব ওল্টপাল্ট হলো।
যে স্বপ্ন নিয়ে দেশ এগোচ্ছিলো তা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে এক লহমায়। চারদিকে শুধু বাঁচার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা। তালেবানি ফতোয়া জারি হয়ে গেছে দেশের কোণায় কোণায়। এ পরিস্থিতিতে তার মতো নারীদের বাঁচার আশা ক্রমে ক্ষীণ হচ্ছে।
এর আগেও অবশ্য বেশ কয়েকবার তালেবানের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে জারিফাকে। তিনবার তার ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় শেষমেশ গত বছরের ১৫ নভেম্বর জারিফার বাবা জেনারেল আবদুল ওয়াসি গাফারিকে খুন করে তালেবান।
তালেবান যতই আশ্বাস দিক না কেন সরকারি কর্মীদের কোনো আঁচড় লাগতে দেবে না তারা। কিন্তু তাতে আর ভরসা রাখতে পারছেন কোথায় জারিফার মতো মানুষেরা! অতীতের অভিজ্ঞতাই যেন বারবার সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে জারিফাদের।
যে ভয়ানক অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে নারীদের, সে কথা ভেবেই শিউরে উঠছেন জারিফা। পালাতে চাইছেন তার বেড়ে ওঠা শহর, দেশ ছেড়ে। কিন্তু সেই উপায়ও তো নেই তার হাতে। তাই এখন শুধু তালেবানের হাতে প্রাণ দেওয়ার অপেক্ষা।
বিএসডি/এমএম