আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে দেখা দেওয়া প্রাণঘাতী সহিংসতার পরদিন উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদানে নেমে এসেছে পিনপতন নীরবতা। মঙ্গলবার রয়টার্সের প্রতিনিধি সুদান থেকে বলেছেন, এখানে রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ, দোকানপাট-ফোন বন্ধ এবং রুটির দোকানের সামনে মানুষের দীর্ঘসারি দেখা গেছে।
সোমবার সুদানের সামরিক বাহিনী অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাতের পর ক্ষমতা দখল করে। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সার্বভৌম কাউন্সিল এবং সরকার ভেঙে দিয়ে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদকসহ দেশটির বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও বেসামরিক কর্মকর্তাকে আটক করেছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় রাস্তায় নেমে লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভে সহিংসতায় প্রাণ গেছে ৭ জনের।
রয়টার্স বলছে, রাজধানী খার্তুম এবং নীল নদ ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহর ওমদুরমানের জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। রাস্তাঘাট সৈন্যরা অথবা বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেডে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। মসজিদের লাউডস্পিকার থেকে জনগণকে সাধারণ ধর্মঘট পালনের ডাক দিতে শোনা যাচ্ছে।
সোমবারের বিশৃঙ্খলার পরের রাত তুলনামূলক নিঃশব্দে কেটে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক ও মন্ত্রিসভার অন্যান্য বেসামরিক সদস্যদের সেনাবাহিনী গ্রেফতার করার পর গণতন্ত্রকামী হাজার হাজার জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে সাতজন নিহত হয়েছেন।
দুই বছর আগে জনপ্রিয় অভ্যুত্থানে দীর্ঘদিনের স্বৈরাচারী শাসক ওমর আল-বশিরকে উৎখাত করার পর সুদানকে গণতন্ত্রের পথে পরিচালিত করার লক্ষ্যে গঠিত সামরিক-বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সার্বভৌম কাউন্সিল ভেঙে দিয়েছেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান।
অভ্যুত্থানের পর দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে তিনি বলেছেন, দেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজন। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার তিনি দেশটির ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনাকারী সব কমিটিও ভেঙে দিয়েছেন।
এখনও গ্রেফতারকৃত প্রধানমন্ত্রী হামদকের অনুগত দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীকেই জরুরি অবস্থা জারির অধিকার দিয়েছে এবং সেনাবাহিনীর কর্মকাণ্ড এক ধরনের অপরাধ। হামদকই এখনও বৈধ অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন তিনি।
খার্তুম এবং ওমদুরমানের প্রধান সড়ক ও সেতুতে যানবাহনের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সামরিক বাহিনী। সব ব্যাংক এবং এটিএম বুথ মেশিন বন্ধ রয়েছে। অর্থ লেনদেনের জন্য বহুল ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সব অ্যাপসের সেবাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওমদুরমানের কিছু বেকারি খোলা থাকলেও অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় লোকজনকে কয়েক ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
ওষুধ কেনার জন্য একটি ফার্মেসির সামনে অপেক্ষা করছেন ৫০ এর কোটায় থাকা এক ব্যক্তি। ওষুধের সংকট দেখা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সঙ্কটের জন্য আমাদের মূল্য চোকাতে হচ্ছে। আমরা কাজ করতে পারছি না, রুটি খুঁজে পাচ্ছি না। এখানে কোনও পরিষেবা নেই, কোনও অর্থ নেই।’
দুই বছর আগে বশির নেতৃত্বাধীন সরকারকে হটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল দেশটির পেশাজীবী অধিকার সংগঠন সুদানিজ প্রফেশনালস এসোসিয়েশন। সোমবারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিরোধিতায় তারা দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
দেশটির তথ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সামরিক অভ্যুত্থানের সমর্থনে বিবৃতি দিতে সেনাবাহিনী চাপ প্রয়োগ করলেও তাতে রাজি হননি অর্থনীতিবিদ, জাতিসংঘের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রী হামদক। পরে তাকে আটকের পর অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে সামরিক বাহিনী। সৈন্যরা বেসামরিক সরকারের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সার্বভৌম কাউন্সিলের সদস্যদেরও আটক করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এবং সংস্থা সুদানে সামরিক অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। একই সঙ্গে আটক নেতাদের দ্রুত মুক্তির আহ্বান এবং ভঙ্গুর প্রায় দেশটিতে অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দিয়েছে তারা। অভ্যুত্থানের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র তাৎক্ষণিকভাবে ৭০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স।