মাহবুব কবির মিলন
আমার তিন জোড়া পাখি আছে। এক জোড়া অস্ট্রেলিয়ান ডায়মন্ড ডাভ বা ঘুঘু, দুই জোড়া দুই প্রজাতির ফিন্স। ঘুঘু জোড়া নতুন জোড় বেঁধেছে। তখনো ডিম দেয়নি। একদিন পানি দিয়ে খাঁচার দরজা লাগাতে ভুলে গেলাম। ঘন্টা খানেক পরে গিয়ে দেখি খাঁচা খালি, ঘুঘু জোড়া উধাও। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল, ওরা বাসা করছিল ডিম দেয়ার জন্য।
এর কিছুদিন পর এক জোড়া ফিন্স ডিম পাড়ল। এরপর দেখি একদিন বাচ্চা ফুটেছে তিনটা। কিচিরমিচির লেগে আছে। ফিন্স বাবা মা বাচ্চাদের খাবার মুখে তুলে দেয়ার জন্য খুব ব্যস্ত থাকে সবসময়।
ঈদের দিন ঠিক একই ভুল করলাম আবার ফিন্সের ক্ষেত্রে। খাবার দিয়ে খাঁচার দরজা লাগাতে ভুলে গিয়েছিলাম। কয়েক ঘন্টা পর গিয়ে দেখি, দরজা খোলা। ফিন্স বাবা মা বাসায় ঢুকছে আর বের হচ্ছে।
বাচ্চাদের খাবার দেয়াতে ব্যস্ত তারা। দরজা খোলা। খোলা আকাশের ডাকে স্বাধীনতা পেয়েও উড়ে যায়নি তারা। বাচ্চাদের জন্য পরাধীনতাই বেছে নিয়েছে পাখিরা।এটাই নাকি স্বাভাবিক। বাচ্চাদের টানে পাখিরা খাঁচার দরজা খোলা থাকলেও উড়ে যায় না।আমরা তো মানুষ, তাই না? আমরা কি পারি না সৃষ্টির সেরা নেয়ামত আমাদের বাচ্চাদের জন্য সংসারকে সুখের এবং শান্তিময় করতে?
সংসারগুলো জাহান্নামের আগুনে পরিণত হচ্ছে এই আমাদের কারণেই। আমরা নিজেরাই দায়ী এরজন্য। অন্য কেউ নয়।
স্বামী স্ত্রী, বৌ-শ্বাশুরি-ননদ, একে অপরের উপর মিনিমাম সন্মান বা মর্যাদাবোধ ধারণ এবং লালন পালন করলে আমরা কিন্তু শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে পারি অতি সহজেই। যা বাচ্চাদের দেবে একটি সুস্থ পরিবেশ। একে অন্যের জায়গায় নিজেকে চিন্তা করুন। স্বামী স্ত্রীর জায়গায়, স্ত্রী স্বামীর জায়গায়। বৌ শাশুরির এবং শাশুরি বৌ এর জায়গায়। এরপর একে অন্যের অবস্থানে থেকে চাওয়া-পাওয়া, ভাল-মন্দ, আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করুন, মূল্য দিন। এই দুই দিনের দুনিয়ায় নিজের জীবন অশান্তিময় করে বাচ্চাদের ধ্বংসের পথে নিয়ে যাবেন না প্লিজ।
আমি ২৯ বছরের বিবাহিত জীবনে স্ত্রীকে কষ্ট দেইনি শুনে আমার এক ক্লাসমেট বান্ধবী বলল, বল.. স্ত্রীকে কষ্ট দিসনি মানে কি? তার সংসারের কাজে, রান্না বান্নায় সাহায্য করেছিস?
আমি বললাম, রান্না আর সংসারের কাজে সাহায্য করলেই কি শান্তিতে রাখা হয়!! ঝগড়া, বাদানুবাদ, রাগারাগি করিনি। তার সুখ শান্তি, ভালবাসা, চাওয়া পাওয়া, অনুভূতিগুলোকে মর্যাদা এবং সন্মান দিয়েছি। মানসিক কষ্টের কারণ হয়নি ইচ্ছে করে। ভুলে হতে পারে।
আসলে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, শান্তি আনা অনেক সহজ, অশান্তির চেয়ে। আমরাই তা জটিল করে তুলছি। বাচ্চাদের মানসিক ট্রমায় ফেলে তাদের জীবনকে বিষিয়ে তুলছি। এটা একজন বাবা মায়ের কাম্য ভূমিকা হতে পারে না।
অনেকের ক্ষেত্রেই দেখছি, শাশুরি নেতিবাচক ভূমিকা আর স্বামীর নির্লিপ্ততা সংসারগুলোকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। আবার অনেক সময় সামান্য কারণে মেয়ের মায়ের অগ্রণী ভূমকায় ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে।
অশান্তি সৃষ্টি মানুষের পছন্দের বিষয় হতে পারে কিভাবে, তা আজ পর্যন্ত বুঝলাম না!!
লেখক- অতিরিক্ত সচিব